শিক্ষক হলেন সমাজে জ্ঞানের বাহক। শিক্ষক হলেন সমাজের ভিত্তি। একজন মানুষের চিন্তাভাবনা, চরিত্র, মূল্যবোধ, জ্ঞান এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে শিক্ষকের হাত ধরে। পরিবার যেমন শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা দেয়, তেমনি বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার মেধা ও মানবিক বিকাশের দিশা দেখান। সেই কারণেই প্রতি বছর শিক্ষক দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় শিক্ষকের ভূমিকা কতটা গভীর ও অপরিহার্য।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস আজ। গুণী শিক্ষকদের স্মরণ করা এবং তাদের সম্মান জানানোর জন্য ইউনেস্কোর উদ্যোগে ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতিবছর ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে। এবছরের শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য, 'শিক্ষকতা পেশা: মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি’। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপন হবে। যা শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সহযোগিতার রূপান্তরমূলক সম্ভাবনা তুলে ধরবে।
প্রত্যেক মহান চিন্তকের পেছনেই একজন শিক্ষক আছেন, যিনি তাঁর চিন্তার জগৎকে আলোকিত করেছেন। তাই শিক্ষকের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য অপরিহার্য। ২০২৫ সালের এই দিবসের লক্ষ্য হলো শিক্ষাদানকে এমন একটি পেশা হিসেবে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা, যেখানে পারস্পরিক সমর্থন, জ্ঞানের আদান-প্রদান এবং সম্মিলিত দায়িত্ববোধকে উৎসাহিত করা হবে।
কারন শিক্ষক আমাদের মূল্যবোধ ও চরিত্র গঠনে ভূমিকা রাখেন। শিক্ষক হলেন- জ্ঞানের আলোকবর্তিকা, জাতি গঠনের স্থপতি, ভবিষ্যতের জন্য দিশা, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের অনুপ্রেরণা, তাই শিক্ষকের মর্যাদা ও প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিতকরণে বিশ্ব শিক্ষক দিবস গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি উপলক্ষ হিসেবে এই দিবসটি উদযাপন হচ্ছে সারা বিশ্বব্যাপী।
জ্ঞানের আলোকবর্তিকা: শিক্ষক হলেন সমাজে জ্ঞানের বাহক। তারা শুধু পাঠ্যবই পড়ান না, বরং জীবনের জটিল বাস্তবতার সঙ্গে মোকাবিলা করার সাহস ও দক্ষতাও গড়ে তোলেন। একটি জাতির উন্নতির জন্য জ্ঞানচর্চা অপরিহার্য, আর সে জ্ঞানকে সঠিকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারেন কেবল শিক্ষক। তাই শিক্ষক দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শিক্ষকের অবদান ছাড়া সভ্যতার অগ্রগতি কল্পনাই করা যায় না।
মূল্যবোধ ও চরিত্র গঠনে ভূমিকা: একজন প্রকৃত শিক্ষক কেবল গণিত বা ইতিহাস বোঝান না, তিনি শিক্ষার্থীদের সৎ, পরিশ্রমী, দায়িত্ববান ও নৈতিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। শিক্ষকরা নীরবে এমন এক সমাজ নির্মাণ করেন, যেখানে ন্যায়বিচার, মানবিকতা ও সহমর্মিতা টিকে থাকে। তাই শিক্ষক দিবস কেবল কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন নয়, বরং চরিত্র গঠনের গুরুত্ব পুনঃস্মরণের দিন।
জাতি গঠনের স্থপতি: যে কোনো দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে দক্ষ ও দায়িত্ববান নাগরিক গড়ে তোলার ওপর। সেই নাগরিক তৈরির কাজ করেন শিক্ষক। তারা একদিকে শিক্ষার্থীকে জ্ঞান দিয়ে গড়ে তোলেন, অন্যদিকে তাকে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্যশীল করে তোলেন। তাই শিক্ষককে জাতির ‘স্থপতি’ বলা হয়। শিক্ষক দিবস এই ভূমিকার স্বীকৃতি দেয়।
শিক্ষকের মর্যাদা ও প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিতকরণ: শিক্ষক দিবস পালনের মাধ্যমে সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেক সময় শিক্ষকরা যথাযথ সম্মান, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সামাজিক স্বীকৃতি পান না। বিশেষ দিবস তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি তাদের অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নকে সামনে আনে।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অনুপ্রেরণা: একজন আদর্শ শিক্ষক হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন বদলে দিতে পারেন। হয়তো কোনো শিক্ষকের অনুপ্রেরণা থেকেই একজন ছাত্র মহান বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক বা নেতা হয়ে উঠেছে। শিক্ষক দিবস সেইসব অনুপ্রেরণাদাতাদের স্মরণ ও সম্মান জানানোর দিন, যা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে দায়িত্ববান শিক্ষক হতে এবং শিক্ষকদের সম্মান করতে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি উপলক্ষ: প্রাত্যহিক জীবনে আমরা খুব কমই শিক্ষকদের কাছে গিয়ে বলি, “আপনাদের জন্যই আমরা আজকের আমরা।” শিক্ষক দিবস আমাদের সেই সুযোগ করে দেয়। শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শিক্ষার্থীদের ভদ্রতা ও দায়িত্ববোধের অংশ হয়ে ওঠে।
ভবিষ্যতের জন্য দিশা: আজকের শিক্ষার্থীই আগামী দিনের নেতা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, উদ্যোক্তা বা চিন্তাবিদ। তাদের জন্য সঠিক দিশা তৈরি করেন শিক্ষক। শিক্ষক দিবস পালনের মাধ্যমে আমরা সেই দিশার গুরুত্ব স্বীকার করি এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করার প্রতিশ্রুতি নিই।
উপসংহার: শিক্ষক দিবস কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা, সম্মান ও দায়িত্ববোধ প্রকাশের দিন। শিক্ষক ছাড়া কোনো জাতি উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে না। তাই শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাদের মর্যাদা রক্ষা করা শুধু একটি বিশেষ দিবসের জন্য নয়, প্রতিটি দিনের দায়িত্ব। তবু বিশেষভাবে শিক্ষক দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়— “শিক্ষকই জাতির পথপ্রদর্শক।”