মানব পাচার একটি জঘন্য অপরাধ, যা আধুনিক সভ্যতার এক কলঙ্ক। অনেকেই মানব পাচারকে শুধু বিদেশে পাড়ি জমানোর একটি অবৈধ উপায় হিসেবে দেখেন কিন্তু এর বিস্তার আরও গভীরে। মানব পাচার শুধু সীমানা পেরিয়ে নয়, দেশের অভ্যন্তরেও ঘটে থাকে। এটি দাস প্রথারই এক নতুন সংস্করণ, যেখানে মানুষ লোভনীয় প্রস্তাবের ফাঁদে পড়ে বা জোরপূর্বক পাচার হয়ে মানবেতর জীবনের শিকার হয়।
পাচারকারীরা সাধারণত দুর্বল আর্থিক অবস্থা বা ভালো জীবনের স্বপ্ন দেখা মানুষদের টার্গেট করে। তারা বিদেশে ভালো চাকরি, উচ্চ বেতন বা দ্রুত উন্নতির প্রলোভন দেখায়। কিন্তু এই লোভনীয় প্রস্তাবের আড়ালে লুকিয়ে থাকে এক ভয়ংকর বাস্তবতা। মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিরা প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়, জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য হয় এবং তাদের স্বাধীনতা সম্পূর্ণরূপে কেড়ে নেওয়া হয়। তারা এক ধরনের আধুনিক দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।
মানব পাচার প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়ের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। আর সচেতনতাই হোক প্রথম পদক্ষেপ। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু দায়িত্ব রয়েছে।
দেশে বা বিদেশে চাকরির লোভনীয় প্রস্তাব পেলে প্রথমেই সতর্ক হতে হবে। সেই চাকরি ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ খবর নিন। নিশ্চিত না হয়ে কোনো চুক্তি বা আর্থিক লেনদেনে যাবেন না।
আপনার এলাকায় কোনো অপরিচিত বা সন্দেহজনক ব্যক্তির আনাগোনা দেখলে সতর্ক থাকুন। তাদের আচরণে সামান্যতম সন্দেহ হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা পুলিশকে জানান।
দূরে কোনো আত্মীয় বা অপরিচিত জায়গায় মেয়ে বিয়ে দেওয়ার সময়, ছেলের পরিবারের বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজ খবর নেওয়া উচিত।
ট্যুরিস্ট ভিসায় বিদেশে গিয়ে অবৈধভাবে থেকে যাওয়ার ধারণা পরিহার করুন। এতে আপনি আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন এবং পাচারকারীদের সহজ শিকারে পরিণত হতে পারেন।
বিদেশে যাওয়ার জন্য অবৈধ বা ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে জীবনের ঝুঁকি থাকে এবং পাচার হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়।
পাচারের শিকার ব্যক্তিরা যখন ফিরে আসে, তখন তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন। তাদের প্রতি সম্মান ও মর্যাদা বজায় রেখে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করা আমাদের সবার কর্তব্য।
মানব পাচার শুধু ভুক্তভোগীর জীবনই নষ্ট করে না, এটি সমাজের কাঠামো এবং দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতার মাধ্যমেই এই ভয়ংকর অপরাধকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। মানব পাচারমুক্ত এক মানবিক সমাজ গড়ার জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই এগিয়ে আসা উচিত।
লেখক : যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।