ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

লাদাখে সহিংস বিক্ষোভের পর কারফিউ জারি

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৪:৫৮ পিএম
লাদাখের রাজধানী লেহতে কারফিউ জারি করেছে সরকার। ছবি- সংগৃহীত

লাদাখের রাজধানী লেহতে কারফিউ জারি করেছে ভারত সরকার। কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলে রাজ্যের মর্যাদার দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে চার জন নিহত হওয়ার পর এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সংঘর্ষে আরও অনেকেই আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির একটি কার্যালয়েও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

এরইমধ্যে আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মী সোনাম ওয়াংচুকের ওপর সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ এনেছে সরকার। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

২০১৯ সালে আধা-স্বায়ত্তশাসন হারায় পার্বত্য অঞ্চল লাদাখ। ওই সময় বিজেপি সরকার এটিকে তৎকালীন ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে উভয় ক্ষেত্রে সরাসরি শাসন চালু করে।

লাদাখের জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। অঞ্চলটি চীন ও পাকিস্তানের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত। এর মধ্যে সহিংসতা শুরু হয় লেহ এলাকায়, যেখানে বহু দশক ধরে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ পৃথক অঞ্চল গঠনের দাবি জানিয়ে আসছেন। অন্যদিকে মুসলিম-অধ্যুষিত কারগিল জেলা ঐতিহাসিকভাবে ভারতশাসিত কাশ্মীরের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পক্ষে ছিল।

তবে ২০১৯ সালের পর থেকে দুই সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে লাদাখের রাজ্যের মর্যাদা পুনর্বহাল ও বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে আসছে। এতে ভূমি ও চাকরির কোটার নিশ্চয়তা পাওয়ার কথাও বলা হচ্ছে।

এদিকে বুধবারের সহিংসতার সঠিক কারণ স্পষ্ট নয়। তবে গত কয়েক মাস ধরে অঞ্চলটিতে বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন চলছিল এবং রাজ্যের মর্যাদার দাবিতে সমর্থন ক্রমশ বেড়েই চলেছে। কিন্তু বুধবারের ঘটনাই ছিল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ।

এক বিবৃতিতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, অনশনরত সোনাম ওয়াংচুক আন্দোলনকারীদের উসকে দিয়েছেন। তিনি আরব বসন্ত ও নেপালে জেন-জি আন্দোলনের উদাহরণ টেনে উত্তেজনাকর মন্তব্য করেছেন বলে মন্ত্রণালয়ের দাবি।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় বিজেপি কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছেন, ভবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন এবং পুলিশের একটি গাড়িও পোড়ানো হয়েছে। এতে অন্তত ৩০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।

সংবাদ সংস্থাগুলোর খবরে বলা হয়েছে, পুলিশ গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করায় বহু বিক্ষোভকারী আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু প্রাণহানি ঘটে।

এদিকে, গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে অনশন শুরু করলেও তা ভেঙে আন্দোলনকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ওয়াংচুক। তিনি বলেন, সহিংসতা আন্দোলনের ক্ষতি করবে।

তিনি সহিংসতায় নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে বলেন, দীর্ঘদিন বেকার থাকা তরুণদের হতাশাই তাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে।

লাদাখ বৌদ্ধ সংঘের সভাপতি চেরিং দর্জে লাখরুক বলেন, ‘লাদাখের যুবসমাজ সহিংসতার বিরুদ্ধে। কিন্তু তারা ক্ষুব্ধ, কারণ সরকার বারবার আলোচনার সময় পিছিয়ে দিচ্ছে এবং বেকারত্বও বাড়ছে।’

তিনি আরও বলেন, যখন মানুষ অনশনে ছিল তখনো সরকারের পরবর্তী আলোচনার তারিখ অনেক দেরিতে নির্ধারণ করায় আন্দোলনকারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

সমাজকর্মী ও প্রকৌশলী ওয়াংচুক শিক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করে জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি পান। তিনি লাদাখে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর স্থানীয়দের ক্ষমতা বৃদ্ধির যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা পূরণ হয়নি। ফলে বাইরের অর্থনৈতিক প্রভাব বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সংস্কৃতি, ভূমি ও সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়েছে।

তবে কেন্দ্রীয় সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, ২০২৩ সাল থেকে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চলছে এবং এতে ‘অসাধারণ অগ্রগতি’ হয়েছে।

সরকারের দাবি, ওয়াংচুকসহ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তারা নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছে। কিন্তু ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিছু ব্যক্তি’ অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট নন।