ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের দাবি

‘মাদকবাহী নৌকায় মার্কিন হামলা এক প্রকার স্বৈরাচারী আচরণ’

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ০২:৩৯ পিএম
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। ছবি: সংগৃহীত

ক্যারিবীয় সাগরে মাদকবাহী সন্দেহভাজন নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলাকে ‘স্বৈরাচারী আচরণ’ আখ্যা দিয়েছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এই হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলসহ বিভিন্ন অবৈধ মাদক চালান রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দাবি করছে। এ মাসের শুরু থেকে চালানো এসব হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

আইন বিশেষজ্ঞ ও মার্কিন আইনপ্রণেতারা বলছেন, এসব হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। এসব হামলায় যদি কলম্বিয়ান নাগরিক নিহত হয়ে থাকে, তবে মার্কিন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত বলে জানান গুস্তাভো পেত্রো।    

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, কেন একটি নৌকাকে থামিয়ে ক্রুদের গ্রেফতার না করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হলো? এটাকেই হত্যাকাণ্ড বলা হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মাদকবাহী সন্দেহে কোনো স্পিডবোট থামাতে গিয়ে কারও মৃত্যুর প্রয়োজন নেই।

 

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আরও জানান, তার দেশ দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন সংস্থাগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কোকেনবাহী নৌকা আটক করেছে, তবে এতদিন কখনও প্রাণহানি ঘটেনি। তার ভাষায়, একটি পিস্তলের বেশি কিছু ব্যবহার করা হলে সেটিই শক্তির অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োগ।

ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, হামলাগুলো মূলত কলম্বিয়ার প্রতিবেশী ভেনেজুয়েলার নৌকাকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো লক্ষ্যবস্তু ও নিহতদের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেনি। প্রথম আক্রমণে ভেনেজুয়েলার কুখ্যাত ‘ত্রেন দে আরাগুয়া’ গ্যাংয়ের সদস্যরা ছিল বলে ওয়াশিংটনের দাবি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।

মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা ইতোমধ্যে হোয়াইট হাউসের কাছে এসব হামলার বৈধতা নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা একে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া ছিল— ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে মাদক চালান বন্ধ করতে এবং দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করতে মার্কিন শক্তির সবকিছু ব্যবহার করতে প্রস্তুত।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে নিউইয়র্কে অবস্থানকালে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পেত্রো বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন কলম্বিয়ার জনগণকে ‘অপমান’ করছে এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো কখনও মাথা নত করবে না।  

গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ট্রাম্প লাতিন আমেরিকা নীতি কঠোর করেছেন। তিনি অবৈধ অভিবাসী হিসেবে যাদের চিহ্নিত করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক নির্বাসন অভিযানও শুরু করেছেন। একই সঙ্গে মেক্সিকোসহ লাতিন আমেরিকার কয়েকটি মাদকচক্র ও অপরাধী সংগঠনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। নতুন নৌবাহিনী মোতায়েনসহ হাজারো মেরিন ও নাবিক সেখানে অবস্থান করছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বহুবার বিরোধে জড়িয়েছেন পেত্রো। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি পাল্টা মন্তব্য করেন, ট্রাম্পই যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছেন।পেত্রো বলেন, একসময় ট্রাম্প আমাকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে অপমান করেছিলেন। এখন তিনি আমার দেশকেও অপমান করছেন।