উত্তর কোরিয়ার কাছে প্রায় দুই হাজার কেজি উচ্চমাত্রা-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে বলে দাবি করছে দক্ষিণ কোরিয়া।
পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রধান উপাদান হলো সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম। এটি একটি চুল্লিতে পোড়ালে প্লুটোনিয়ামে রূপান্তর করা যায়। ৯০ শতাংশের বেশি বিশুদ্ধতায় পৌঁছানো ইউরেনিয়ামকে অস্ত্র তৈরির জন্য উপযুক্ত বলে ধরে নেওয়া হয়, যা পারমাণবিক বিস্ফোরণের জন্য প্রয়োজনীয় চেইন রিঅ্যাকশন ঘটাতে সক্ষম। সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার হিসেবে, একটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ৪২ কেজি উচ্চমাত্রা-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন। সে হিসেবে দুই হাজার কেজি ইউরেনিয়াম দিয়ে প্রায় ৪৭টি বোমা বানানো সম্ভব।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানায়, উত্তর কোরিয়ার কাছে দীর্ঘদিন ধরেই ‘উল্লেখযোগ্য’ পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান।
দক্ষিণ কোরিয়ার সমন্বয়বিষয়ক মন্ত্রী চুং দং-ইয়ং বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের ফেডারেশনসহ (এফএএস) বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার হাতে বর্তমানে প্রায় দুই হাজার কেজি উচ্চমাত্রা-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে, যার বিশুদ্ধতা ৯০ শতাংশ বা তারও বেশি।’
তিনি সাংবাদিকদের আরও জানান, ‘এই মুহূর্তেও উত্তর কোরিয়ার চারটি স্থানে ইউরেনিয়াম সেন্ট্রিফিউজ চালু রয়েছে।’
চুং বলেন, ‘মাত্র পাঁচ থেকে ছয় কেজি প্লুটোনিয়াম দিয়েই একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব। সেখানে দুই হাজার কেজি উচ্চমাত্রা-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম থেকে বিপুল সংখ্যক পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা যাবে।’
চুং আরও বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করা এখন জরুরি বিষয়।’ তবে তিনি এও বলেন, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এটি ঠেকানো যাবে না, একমাত্র সমাধান হলো ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ং-এর মধ্যে শীর্ষ বৈঠক।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন চলতি সপ্তাহে বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় রাজি, তবে শর্ত হলো তিনি যেন পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বজায় রাখতে পারেন।
২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। এরপর থেকে তারা জাতিসংঘের নানা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে। তবে দেশটি বহু বছর ধরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র চালালেও গত বছরের সেপ্টেম্বরের আগে কখনো প্রকাশ্যে তথ্য দেয়নি।
সিউলের গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, উত্তর কোরিয়া একাধিক ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র পরিচালনা করছে, যার মধ্যে রয়েছে ইয়ংবিয়নের কেন্দ্র। আলোচনার পর এটি নিষ্ক্রিয় করা হলেও ২০২১ সালে আবার চালু করা হয়।
মন্ত্রী অভিযোগ করেন, আগের প্রশাসন উত্তর কোরিয়াকে ‘প্রধান শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং প্রথমেই পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের দাবি জানায়। এর ফলে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সক্ষমতা আরও বেশি প্রসারিত হয়েছে।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং উত্তর কোরিয়ার প্রতি তুলনামূলক নমনীয় নীতির অঙ্গীকার করেছেন।