সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, ব্যাপক বিক্ষোভের ঢেউ দেখা গেছে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে প্রায়শই জেনারেশন জেডের তরুণরা রয়েছে। বাংলাদেশে গত বছর ছাত্র-জনতার বিশাল আন্দোলন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল; পরে সেই সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে হয়। থাইল্যান্ডে কঠোর দমন সত্ত্বেও যুবকদের নেতৃত্বে পুনরায় সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে। নেপালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ তরুণরা সেপ্টেম্বরের শুরুতে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বাধ্য করেছিল। ইন্দোনেশিয়াতেও আগস্টে তরুণদের নেতৃত্বে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় এবং তা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই বিক্ষোভগুলোকে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রেরক হিসেবে দেখিয়েছে। এশিয়ার যুবসমাজ সরকারি দুর্নীতি, সীমিত কর্মসংস্থান, বৈষম্য এবং জনসেবা ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার তাদের আন্দোলনকে দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। তবে আশির দশকের বৃহৎ আন্দোলনের মতো এই বিক্ষোভগুলো সরাসরি সরকারের ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলবে কি না তা নিশ্চিত নয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, আধুনিক আন্দোলনগুলো—যেমন ছড়িয়ে থাকা, নেতৃত্বহীন এবং অনলাইনে সংগঠিত—প্রকৃত পরিবর্তন আনতে তুলনামূলকভাবে কম কার্যকর।
হার্ভার্ডের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিকা চেনোয়েথ ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, ১৯৬০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত অহিংস আন্দোলনের সফলতার হার ছিল ৪০ শতাংশের বেশি। কিন্তু ২০১০ সালের পর, এমন সব বিপ্লব বা আন্দোলনের সফলতা ৩৪ শতাংশ কমে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
আরব বসন্তের উদাহরণ স্পষ্ট। সোশ্যাল মিডিয়ার ইন্ধনে শুরু হওয়া বিশাল বিক্ষোভ প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও প্রায় সব দেশেই তা চূর্ণ বা অবমূল্যায়িত হয়েছে। তিউনিসিয়াও প্রাথমিকভাবে সাফল্যের উদাহরণ হলেও এখন কঠোর কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এ কারণেই বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এসব বিপ্লবের কোনো প্রকৃত নেতা ছিল না; এর ফলে তরুণরা কার্যকর রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সংগঠিত হতে পারেনি।’
এশিয়ার বর্তমান জেড আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যও প্রায় একই—টেকসই তৃণমূল ভিত্তি, শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং দীর্ঘমেয়াদী সংগঠন নেই। এ কারণে এগুলো সহজেই দমন করা যায়। সরকারগুলো বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে পারে, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে এবং ভয় দেখানোর মাধ্যমে সামাজিক মিডিয়ার অগভীর অংশগ্রহণকে কাজে লাগাতে পারে।
মিয়ানমারে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর অহিংস আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে; এর ফলে অনেক তরুণ অস্ত্র হাতে নিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় প্রথমে রাষ্ট্রপতি প্রাবোওকে ছাড় দিতে বাধ্য করা হলেও তিনি দ্রুত দমনমূলক নীতি চালু করেছেন।
বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের ফলস্বরূপ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলেও এটি দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক সংস্কারে ব্যর্থ হয়েছে।
নেপালের নতুন সরকারও ভাঙনপ্রবণ, কারণ আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী যুবনেতারা অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী নিয়ে অসন্তুষ্ট।
তবে কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। থাইল্যান্ডে সম্প্রতি যুব নেতৃত্বাধীন আন্দোলন শক্তিশালী নেতাদের জন্ম দিয়েছে। তারা সামরিক শক্তি হ্রাস ও সাংবিধানিক সংস্কারের দাবিতে ‘পিপলস পার্টি’ গঠন করেছে, যা ২০২৩ সালের নির্বাচনে সর্বাধিক আসন অর্জন করেছে।
শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের অর্থনৈতিক সংকট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের পর রাজাপক্ষে পরিবার ক্ষমতা হারিয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার স্থানান্তর হয়েছে এবং নতুন প্রশাসন সংবিধান সংশোধন ও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের দিকে এগোচ্ছে।
এই উদাহরণগুলো দেখায়, জেনারেশন জেডের আন্দোলন সফল হতে হলে কেবল সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নির্ভর নয়; এর জন্য সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল, প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি এবং অনলাইন আন্দোলনের মধ্যে সহযোগিতা ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা অপরিহার্য। থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার ঘটনা এ প্রক্রিয়ারই প্রমাণ।

