সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিদ্যুৎ চন্দ্র সরকার

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ০৮:৫৫ পিএম

মতামত

পরিবেশ ভাবনা : ভবিষ্যতের কাছে আজকের অঙ্গীকার

বিদ্যুৎ চন্দ্র সরকার

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ০৮:৫৫ পিএম

বিদ্যুৎ চন্দ্র সরকার

বিদ্যুৎ চন্দ্র সরকার

“এসেছে নতুন শিশু,
তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের...
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি।”
                                         —সুকান্ত ভট্টাচার্য

এই পঙক্তিগুলো শুধু কবিতার নয়, এ যেন ভবিষ্যতের দরজায় দাঁড়িয়ে বর্তমানের এক নিঃশব্দ স্বীকারোক্তি। কবি এখানে কোনো শিশুকে নয়, ডাক দিয়েছেন এক সম্পূর্ণ প্রজন্মকে—যে প্রজন্ম জন্ম নেবে আমাদের সিদ্ধান্তের ভার কাঁধে নিয়ে, যে শ্বাস নেবে আমাদের রেখে যাওয়া বাতাসে, যে পানি পান করবে আমাদের কলমে স্বাক্ষরিত প্রকল্পের ছায়ায়, যে খাদ্য গ্রহণ করবে আমাদের নির্ধারিত পরিবেশনীতির ফল হিসেবে। “এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব”- এ কেবল কবির কাব্যপ্রতিজ্ঞা নয়, এটি এক নৈতিক ঘোষণা। এটি সেই অঙ্গীকার, যা আজকের সভ্যতার দিকে ছুড়ে দেওয়া এক কঠিন প্রশ্ন—আমরা কি আমাদের উত্তরসূরিদের জন্য পৃথিবী রেখে যাচ্ছি, নাকি কেবল সমস্যা?

পরিবেশগত ন্যায়বিচার ঠিক এখানেই শুরু হয়, যেখানে বর্তমান প্রজন্ম বুঝতে শেখে যে পৃথিবীর ওপর একচ্ছত্র অধিকার তাদের নেই। নদী, বন, বায়ু, মাটি এসব কোনো কর্পোরেশনের সম্পদ নয়, কোনো সরকারের ব্যক্তিগত মালিকানা নয়, কোনো প্রজন্মের একক ভোগ্য বস্তু নয়। এগুলো উত্তরাধিকার, আগামী শিশুর কাছে আমাদের রেখে যাওয়া আমানত।

টেকসই উন্নয়ন মানে কেবল সবুজ পোস্টার নয়, আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ছবি তোলা নয়, বা নীতিপত্রে বড় বড় শব্দ নয়। টেকসই উন্নয়ন মানে সাহসী স্বীকারোক্তি, যে উন্নয়ন ভবিষ্যতের ক্ষতি করে, সেটি উন্নয়ন নয়—তা মেকি উন্নয়ন, উন্নয়নের ভান। এই পৃথিবী কোনো পরীক্ষাগার নয়, যেখানে ভুলের মূল্য আগামী প্রজন্ম দেবে। এটি কোনো ডাস্টবিন নয়, যেখানে আমরা আমাদের ব্যর্থতাকে ছুড়ে ফেলে চলে যাব। এই পৃথিবী এক শিশুর শৈশব, যার বাতাসে কলমও লেখা হয়, স্বপ্নও লেখা হয়।

আমরা যদি আজ বন উজাড় করি, কাল সে শিশুর বই পাতায় থাকবে পাতা ছাড়া গাছের ছবি। আমরা যদি আজ নদী শাসন করে নদীকে মেরে ফেলি তবে কাল সে শিশুর মানচিত্রে থাকবে ‘এক সময় এখানে নদী ছিল’। নদীগুলো যেন প্রতিদিন একটা একটা করে মারা যাচ্ছে। পাহাড়ের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে আছে অনৈতিক উন্নয়নের ভার। সমুদ্রের লোনা জল ধীরে ধীরে গ্রামগুলোকে বিছানা থেকে উঠতে দিচ্ছে না—তারা জেগেই ডুবছে। এই সংকটের অধিকাংশই প্রকৃতির খামখেয়ালি নয়; এগুলো মানুষের অপরিকল্পিত পরিকল্পনার ফল।

এই প্রজন্ম যদি পরিবেশ না বোঝে, আগামী প্রজন্ম ইতিহাস পড়বে ধ্বংসের!

আমরা যদি আজ প্রকৃতিতে বিষ ছড়াই, কাল সে শিশুর কণ্ঠে থাকবে প্রশ্ন, “আমাদের দোষ কোথায় ছিল? এই লেখা, এই আলোচনা, এই বিশ্লেষণ—সবই সেই নবজাতকের কাছে একটি প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিশ্রুতি। একটি স্বীকারোক্তি, আমরা আর নীরব থাকব না। আমরা উন্নয়নের নামে মৃত্যুকে স্বাভাবিক ভাববো না। আমরা অগ্রগতির ছদ্মবেশে ধ্বংসকে মেনে নেব না। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য যে অঙ্গীকার করেছিলেন তার কবিতায়, আজ তার বাস্তব ভাষা হলো পরিবেশবিজ্ঞান, যার আধুনিক নাম পরিবেশগত ন্যায়বিচার

এবং তার ভবিষ্যতমুখী পরিচয় হলো টেকসই উন্নয়ন

আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে রেখে যাচ্ছি কী—

সবুজ উপত্যকা, না প্লাস্টিকের স্তূপ? 
নির্মল বাতাস, না রাসায়নিক গন্ধ? 
নদীর গর্জন, না বিষাক্ত নীরবতা?

একদিন আমাদের সন্তানরা ইতিহাস বইয়ে যুদ্ধের গল্পের সাথে পড়বে, একসময় মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল এবং সেই যুদ্ধে কেউই জয়ী হয়নি ! 
এই লেখা কেবল আপনার পড়ার জন্য নয়, 
এই লেখা আপনার সন্তানের জন্য।
এই লেখা সেই শিশুর জন্য যে এখনো জন্মায়নি,
কিন্তু যার পৃথিবী আজ আমরা তৈরি করছি।

সহকারী অধ্যাপক (পরিবেশ বিজ্ঞান), 
বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, তুরাগ, ঢাকা

Link copied!