ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ নেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তাল ঢাকা। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকারবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে এই নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা।
মেয়র পদের জন্য ইশরাক সমর্থকরা টানা পাঁচ দিন নগর ভবন আটকে রেখে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। সেখানে আসিফ মাহমুদের কুশপুত্তলিকায় প্রতীকী অপমানও করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে, আসিফ মাহমুদ এবং এনসিপির অন্য নেতারা ইশরাকের মেয়র পদে বসার ক্ষেত্রে আইনি জটিলতাকে তুলে ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের তীব্র সমালোচনা করছেন।
এবার ইশরাক হোসেন এক ধাপ এগিয়ে পদত্যাগ চেয়ে বসলেন দুই ছাত্র উপদেষ্টার। সরাসরি দুই উপদেষ্টা নাম উল্লেখ করে বুধবার (২১ মে) সকালে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তিনি এ-সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন।
ইশরাক লিখেছেন, ‘গণতান্ত্রিক ভাষায়, রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে যৌক্তিক কারণে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি। যেহেতু এটা প্রতীয়মান যে, আপনারা রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত আছেন, হয়তো আগামীতে সরাসরি যুক্ত হবেন এবং এটাও অনেকটা স্পষ্ট আপনারা নির্বাচন করবেন। তাহলে আপনাদের পদত্যাগের দাবি কি অযৌক্তিক? নাকি এটাই সঠিক পদক্ষেপ হবে এবং আপনাদের নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের অবসান ঘটবে।
আপনাদেরই নাহিদ ইসলাম যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছে সেটাই অনুসরণ করুন। উনি চাইলে হয়তো আরও কিছুদিন মন্ত্রিত্ব করে তারপর এনসিপিতে যেতে পারতেন। একটা সময় ছিল সার্জিস আলম হাসনাত আবদুল্লাহরা জোরালোভাবে দাবি করলে ওনারাও হয়তো মন্ত্রিত্ব নিতে পারতেন। কিন্তু তারা রাজনীতি করবেন বলে সেই কর্মপন্থা বেছে নিয়েছেন। হয়তো এক দিন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে পূর্ণাঙ্গভাবে মন্ত্রীর দায়িত্ব, ক্ষমতা ও সম্মান আবার পাবেন।
আপনারা পদত্যাগ করলে বর্তমান সরকারের নিরপেক্ষতার ইমেজই বৃদ্ধি পাবে। এখনো মনে করি, সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে দলীয় ও সাংগঠনিক কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারলে দেশ ও জনগণকে আপনারা আরও ভালো কিছু দিতে পারবেন।
আর ক্ষমতা ধরে রাখলে আপনাদের দলের লোকজনকে বিশেষ সুবিধা দিতেই হবে, এটা থেকে বিরত থাকার বা শতভাগ নিরপেক্ষ থাকার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা অথবা ক্ষমতা আপনাদের নাই। কারোরই থাকে না। কাঁঠাল ভাঙবে আপনাদের মাথায়, খাবে কিন্তু অন্য সবাই।
এখন নিশ্চয়ই বলবেন বা ভাববেন ক্ষমতার লোভে অবৈধ মেয়র হওয়ার জন্যে দিনের পর দিন আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দিয়ে জনভোগান্তি তৈরি করে নিজেকে সাধু বানিয়ে আমাদের নীতিবাক্য শোনাচ্ছেন তাই না ? আমি নিজেও কি কম সমালোচনার শিকার হয়েছি এটি করতে গিয়ে? কিন্তু আমার আর কোনো উপায় ছিল না। আপনাদের যে ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে সেটা জনগণকে বোঝানো দেশের জন্যে প্রয়োজন ছিল এবং আজ অবধি আমাকে বাঁধা দেওয়ার কাজটি যৌথ সিদ্ধান্তে হচ্ছে এটা মিনিমাম রাজনৈতিক বোধসম্পন্ন মানুষ বোঝে। কিন্তু আমি বলব, এটা ছিল ওনাদের ভুল পলিসি, ব্যবহার হলেন আপনি আসিফ ভূঁইয়া। আইন আদালত মেনে নিতে না পারলে কোথা থেকে দেশ সংস্কার শুরু হবে? তারপর যত ইচ্ছা সমালোচনা করতেন, দেখতেন আসলে কি করি। এখন পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া আমাকে সম্পন্ন করতেই হবে।
বন্দোবস্ত তো আগেরটাই অনুসরণ হচ্ছে। আরও পাকাপোক্ত করা হচ্ছে বললেও ভুল হবে না। আপনাদের পদত্যাগের দাবি থেকে সরার কোনো সুযোগ নাই। আপনারাই বা কেন থাকতে চাচ্ছেন?’
আপনার মতামত লিখুন :