চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সোহরাওয়ার্দী হল শাখার ছাত্রশিবির সভাপতি আবরার ফারাবীর পুরোনো ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার ছবি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
এসব ছবি ভাইরাল হওয়ার পর বিতর্ক শুরু হলে ফারাবী নিজেই ফেসবুক পোস্টে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
সোমবার (২১ জুলাই) নিজের ফেসবুক পোস্টে আবরার লেখেন, ‘আমি ২০২৩ সালেই ছাত্রশিবিরে যুক্ত হয়েছি। অথচ ২০২১-২২ সালের কিছু পুরোনো ফেসবুক পোস্টকে সামনে এনে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যেন আমি ৫ আগস্টের পর শিবিরে যোগ দিয়েছি।’
ফারাবী জানান, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আরবি বিভাগে ভর্তি হয়ে সোহরাওয়ার্দী হলে ওঠেন। এরপর মাত্র ২৪ দিনের মধ্যে চারবার রুম পরিবর্তনের শিকার হন। কোভিডের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলে বাড়ি ফিরে যান এবং ২০২১ সালে আবার হলে ফেরেন। এ সময় আব্দুর রব হলে ছিলেন এবং ছাত্রলীগের প্রভাবেই হলজীবন অতিবাহিত করেন।
তিনি লেখেন, ‘তখন শিবিরের কারো সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না, এমনকি ইচ্ছাও ছিল না। বরং নামাজে অবহেলা ও অনিয়মিত জীবন ছিল আমার বাস্তবতা।’
২০২২ সালে তাবলিগ জামাতের সঙ্গে ওঠাবসার মাধ্যমে নিজের জীবনে পরিবর্তন আনতে শুরু করেন ফারাবী। তখন ছাত্রশিবিরের বায়তুল মাল সম্পাদক মুজাহিদ নামে একজনের মাধ্যমে সংগঠনের সঙ্গে পরিচিত হন।
২০২২ সালের জুনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ভারতের দুই নেতার কটূক্তির প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধনে অংশ নেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাধার মুখে পড়ায় তিন শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড জব্দ হয়। এ ঘটনার পর অনেকেই তাকে শিবিরকর্মী মনে করলেও তিনি তখনো সংগঠনে যোগ দেননি বলে দাবি করেন।
২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্রশিবিরে যোগ দেন এবং দাওয়াতি ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হন। একইসঙ্গে ফিলিস্তিন ইস্যুতে একাধিক সংহতি কর্মসূচির আয়োজন করেন।
২০২৪ সালে গণইফতার আয়োজনের মাধ্যমে তার ছাত্রশিবির পরিচয় স্পষ্ট হয়ে যায়। এরপর তিনি পুরোপুরি চবি ক্যাম্পাস থেকে ‘আউট’ হয়ে যান। তবু সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আমি সোহরাওয়ার্দী হলের সেক্রেটারি ছিলাম। এরপর কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিই। আমাদের ‘চবিয়ান দ্বীনি পরিবার’ মিটিং করে আন্দোলনের পরিকল্পনা করে। জনবল কম থাকায় নিজেদের সংগঠনের কর্মীদেরই মিছিলে পাঠানো হয়।’
আলোচিত পুরোনো ফেসবুক পোস্ট প্রসঙ্গে ফারাবী বলেন, ‘তখন পোস্ট আমাদের সিদ্ধান্তে হতো না। ছাত্রলীগের বড় ভাইয়েরা গ্রুপে কনটেন্ট দিতেন, সেগুলো হুবহু শেয়ার করতে হতো। অনেক পোস্টের কথা আমার মনেও নেই, কারণ আগের আইডি এখন আর আমার নিয়ন্ত্রণে নেই।’
চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা আজম নাছিরের সঙ্গে তার একটি ছবির বিষয়ে ফারাবী বলেন, ‘ছবিটি একটি অ্যাসোসিয়েশনের কাজে একজন উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তোলা হয়েছিল। সেখানে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক নানা মানুষ ছিলেন।’
ফারাবী তার পোস্টে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট কিছু পোস্ট ও শব্দচয়নকে ‘ভুল’ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি সেই পোস্টগুলোর জন্য চবি ছাত্রশিবিরের বর্তমান ও তৎকালীন দায়িত্বশীলদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি।’
আপনার মতামত লিখুন :