যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চাপ বাড়লেও রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি আমদানি অব্যাহত রাখছে ভারত, চীন এবং ব্রাজিল। এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, যদি এই দেশগুলো রুশ তেল কেনা বন্ধ না করে, তবে তাদের অর্থনীতির ওপর ‘ধ্বংসাত্মক’ চাপ প্রয়োগ করা হবে।
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্রাহাম জানান, ট্রাম্প প্রশাসন রুশ তেল আমদানিকারক দেশগুলোর ওপর শতভাগ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে। তার দাবি, রাশিয়ার তেলের ৮০ শতাংশ রপ্তানি হয় এই তিন দেশে, আর এর মাধ্যমেই ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা পাচ্ছে মস্কো।
গ্রাহামের বক্তব্যে সরাসরি চীন, ভারত ও ব্রাজিলকে সতর্ক করে বলা হয়, ‘তোমরা যা করছ, তা রক্তমাখা লেনদেন। যদি সস্তা রুশ তেল কিনে যুদ্ধ চালিয়ে যাও, আমরা তোমাদের অর্থনীতি গুঁড়িয়ে দেব।’
এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থান স্পষ্ট হলেও অনেক বিশ্লেষকের মতে এটি বর্তমান আন্তর্জাতিক শক্তিসাম্যের একটি সূক্ষ্ম সংকেত। যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া প্রভাবের সময় হয়তো শেষ হচ্ছে, আর উদীয়মান অর্থনীতিগুলো আরও স্বাধীনভাবে নিজেদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
ট্রাম্প এর আগেও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য অব্যাহত রাখা দেশগুলোর বিরুদ্ধে ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেন। এখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ জোরদার করছে, অন্যদিকে বড় আমদানিকারকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর কৌশল নিচ্ছে।
ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে বলেন, ‘ব্রাজিল, ভারত ও চীনের উচিত পুতিনকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা। নইলে এর বড় মাশুল দিতে হবে।’
তবে এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরাসরি কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই। বাজার ও বৈশ্বিক বাস্তবতা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। দ্বিমুখী মানদণ্ড আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।’
বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের জোরপূর্বক চাপ প্রয়োগ মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির এক পুরোনো ছায়া, যেখানে ভূরাজনৈতিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে মিত্রদের ওপরও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু আজকের বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থায় এমন চাপ বরং উল্টো প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে আরও একবার স্পষ্ট হলো, বিশ্ব এখন আর একক নেতৃত্বাধীন নয়। ক্রমেই আরও বেশি দেশ জাতীয় স্বার্থে স্বাধীন কৌশল গ্রহণে প্রস্তুত, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও।
আপনার মতামত লিখুন :