শহিদদের স্বপ্নের নতুন দেশ গড়তে ছাত্রদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
রোববার (৩ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে লন্ডন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বিএনপির মাসব্যাপী ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, ‘যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে তাদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে আমাদেরই। শহিদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে ছাত্রসমাজকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘তোমাদের নিজেদের মেধা-মননে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি দেশকে গড়ে তুলতে হবে। সেই লক্ষে বিএনপি মানবিক রাজনীতি গড়ে তুলতে চায়। কর্মসংস্থানের রাজনীতি করতে চায়। নিরাপদ দেশের রাজনীতি করতে চায়।
তিনি বলেন, সব ছাত্রকে রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে, এটি জরুরি নয়। নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলাই জরুরি। সব সেক্টরে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলা প্রয়োজন। তোমাদের যোগ্য নেতৃত্ব পারে আগামীর বাংলাদেশকে বদলে দিতে। শহিদদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে।’
তিনি আরও বলেন, দেড় দশকের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে হাজার হাজার নেতাকর্মী হতাহত হয়েছে। জেল-জুলুমের শিকার হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের ছাত্রদল নেতা ওয়াসিমসহ অনেকে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই হাজারের বেশি। সবার প্রতি আমার দোয়া ও শ্রদ্ধা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, লাখো মানুষের সমাবেশ, লাখো ছাত্রের সমাবেশ সেটিই প্রমাণ করেছে। তোমাদের মাধ্যমে দেশের সকল ছাত্র নেতাকর্মীকে জানাই বীরোচিত সালাম। তোমরা সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে গেলে জনগণ তোমাদের সঙ্গে থাকবে। জনগণই বিএনপির ক্ষমতার উৎস।
সমাবেশে তারেক রহমান আরও বলেন, ৭১ স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ, ২৪ স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধে যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা। প্রিয় যোদ্ধারা, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হয়েছে। এ দেশে কেউ প্রতিহিংসার রাজনীতি চায় না। জনগণ চায়, রাজনীতিরি গুণগত পরিবর্তন। কথামালার রাজনীতি নয়, আমরা চাই জনগণের উন্নতি।
তিনি বলেন, তারুণ্যের শক্তি ও নারী শক্তিকে কর্ম পরিকল্পনার বাইরে কটি রাষ্ট্র কখনো গিয়ে যেতে পারে না। প্রযক্তির এ সময়ে যোগে সবার সামনে সম্ভানার দুয়ার উন্মুক্ত। সবার জন্য আমরা কটি বাস্তবসম্মত ভিশন ঠিক করছি। সবাইকে তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, তোমরা ভবিষ্যতে দেশকে গড়ে তুলবে। সেজন্য নিজেদেরকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে একাধিক ভাষা জানতে হবে। বিএনপি তরুণদেরকে একাধিক ভাষা শিক্ষার সুযোগ তৈরি করে দিতে চাই। ইংরেজি ভাষার ওপর আমরা আলাদা জোর দিতে চাই। কিন্তু শুধু চাই, মরা আরও কতগুলো ভাষা রাখতে চাই, যেগুলো জানলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিজেদেরকে তৈরি করতে পারবে।
এর আগে বিকেল সোয়া ৩টায় লন্ডন থেকে অনলাইনে সমাবেশে যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দুপুর ৩টার দিকে মঞ্চে উপস্থিত হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার আগে থেকেই সমাবেশস্থলে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুজ্জামান দুদু, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ ছাত্রদলের সাবেক নেতারা।
এরপর কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতেই জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়।
সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান। এর আগে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির বিগত ১৫ বছরে বিভিন্ন আন্দোলনে নিহত নেতাকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
দুপুর আড়াইটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও শুরু হয়, তবে বৃষ্টিতে দমে না গিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা স্লোগান, মিছিল ও ব্যানার নিয়ে উপস্থিত হন শাহবাগ এলাকায়।
বাস বা পিকআপ দূরে থামিয়ে রেখে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে পৌঁছান নেতাকর্মীরা। তাদের প্রায় সবার মাথায় ব্যান্ড, হাতে জাতীয় পতাকা ও ছাত্রদলের পতাকা। তারা স্লোগান দেন ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’, ‘জিয়ার সৈনিক এক হও’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, ‘খালেদা জিয়া ভয় নাই’ প্রভৃতি।
আপনার মতামত লিখুন :