জাতীয় পার্টির (জাপা) বহিষ্কৃত নেতারা আজ ডেকেছেন দলের কাউন্সিল। নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অবহিত করে প্রতিনিধি পাঠানোর আবেদনও করা হয়েছে। যা আইনিভাবে অবৈধ দাবি করে জাতীয় পার্টির নামে সম্মেলন আয়োজন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জি এম কাদেরের অংশ।
জি এম কাদের অংশের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী এই সম্মেলনকে ‘বেআইনি’ দাবি করে বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের দেশে আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিয়মিত অফিস করছেন। তিনি কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করেননি। চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে অন্য কোনো পন্থায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁদের কার্যক্রম বেআইনি ও অবৈধ।’
অন্য দিকে সম্প্রতি বহিষ্কৃত জি এম কাদেরবিরোধী অংশের প্রধান নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, ‘আমরা আদালতের আদেশ ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই কাউন্সিল আয়োজন করেছি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা অবহিত করেছি এবং কাউন্সিলে তাদের প্রতিনিধি আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে কাদের অংশের মহসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীর দাবি- ‘আদালতের আদেশের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে।’ আনিসুল-চুন্নু গ্রুপ বলছে, ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতেই নতুন সম্মেলন।’
শুক্রবার (৮ আগষ্ট) কাউন্সিল উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আমরা জাতীয় পার্টিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। কাউন্সিল করে আমরা গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ধারা বাতিল করে দেব। কোনো একক নেতৃত্বে নয়, জাতীয় পার্টি চলবে যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে।’
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আরও বলেন, জাতীয় পার্টির কাউন্সিল হবে ঐতিহাসিক। এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে দলের মধ্যে দীর্ঘদিনের যে বিভেদ রয়েছে, সে বিভেদ শেষ করে দিয়ে বৃহত্তর ঐক্য করে পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টির নবযাত্রা শুরু হবে। এই কাউন্সিলে সারা দেশ থেকে জাতীয় পার্টির কয়েক হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট অংশ নেবেন।
বহিস্কৃত গ্রুপের নেতা এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, দেশের মানুষ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা দেখেছিল, সেই প্রত্যাশাকে বাস্তবতায় রূপ দিতে জাতীয় পার্টি নতুন অভিযাত্রায় নেমেছে।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ৩০ জুলাই ২০২৫ তারিখে ঢাকার একটি নিম্ন আদালতের আদেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। আদালতের এই আদেশের ফলে পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম এক অনিশ্চয়তা ও স্থবিরতার মুখে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় দলকে সাংগঠনিক স্থবিরতা থেকে মুক্ত করে গণতন্ত্র, গঠনতন্ত্র এবং নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষায় অতি দ্রুত জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করা প্রয়োজন ছিল।
এ পর্যায়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারী আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে রাজনীতি করেছি, তাই শিষ্টাচারের কারণে আমি মনে করি, তাঁরা কাউন্সিল থেকে বিরত থাকবেন। তাঁদের এই কাউন্সিল রাজনীতিতে কোনো সুবাতাস আনবে না। কারণ, তাঁদের এই কাউন্সিল আহ্বান সম্পূর্ণ অবৈধ।’
বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের কাউন্সিলে জাতীয় পার্টির মূলধারার কোনো নেতা-কর্মী যাবেন না বলে দাবি করেন শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘যারা জাতীয় পার্টি ভেঙেছে, তারা কেউই রাজনীতিতে সফল হতে পারেনি। এরশাদের জাতীয় পার্টি বা জি এম কাদেরের জাতীয় পার্টি হচ্ছে মূলধারার জাতীয় পার্টি। মূলধারার জাতীয় পার্টি টিকে ছিল, টিকে থাকবে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, পার্টির চেয়ারম্যানসহ দুজনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
শামীম হায়দার বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনাটি হলো, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও দপ্তর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই আদেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে বাতিল করা হয়নি, চেয়ারম্যান পদ অবৈধ ঘোষণা করা হয়নি এবং বর্তমান চেয়ারম্যানকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়নি। মানে হচ্ছে, যারা প্রাথমিক সদস্যপদসহ বহিষ্কৃত হয়েছে, তারা অদ্যাবধি পর্যন্ত বহিষ্কৃত আছে। ফলে বহিষ্কৃতদের পক্ষে জাতীয় পার্টির কোনো কর্মকান্ডে অংশ নেওয়া অবৈধ।’
প্রশঙ্গত গত ২৮ জুন হওয়ার কথা ছিল জাতীয় পার্টির সম্মেলন। তবে ১৬ জুন সম্মেলনের জন্য জায়গা না পাওয়ার কথা বলে তা স্থগিত করেন জি এম কাদের। এর বিরোধিতা করায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নসহ সিনিয়র নেতাদের বহিষ্কার করেন কাদের। এরপর থেকেই আবারও দুই ভাগে বিভক্ত জাতীয় পার্টি।
বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। গত ৩১ জুলাই চেয়ারম্যানের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। চেয়ারম্যান পদ ধরে রাখতেই সম্মেলন বাতিল করেন জি এম কাদের; এমন অভিযোগ আনিসুল-চুন্নুদের। তাই নতুন কমিটি গঠনে সম্মেলন ডেকেছে আনিসুল-চুন্নু গ্রুপ। যা আইনিভাবে অবৈধ বলছে, কাদের গ্রুপ।
আপনার মতামত লিখুন :