ঢাকা রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫

ঢাবি ছাত্রী-উপাচার্যকে নিয়ে জবি ছাত্রদল নেতার মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রীদের সঙ্গে উপাচার্যকে জড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন সমালোচনার মুখে পড়েছেন। 

শনিবার (৯ আগস্ট) রাতে ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার প্রতিনিধিদের ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময়ের ছবি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করে তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এই পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক নিন্দার ঝড় ওঠে।

শামসুল আরেফিনের পোস্টে তিনি ছবির ক্যাপশনে লিখেন, ‘সেরের জন্য কয়টা তালি’। সেই পোস্টে জিএমএস আহমেদ রেজা নামে একটি আইডি থেকে কমেন্ট করা হয়, ‘ভাই, ছবিতে সমস্যাটা কোথায়? রাজনীতি করবেন, এতটুকু সেন্স রাখবেন না, কোথায় সমালোচনা বা ট্রল করতে হয়, আর কোথায় না?’

এ কমেন্টের রিপ্লাইতে শামসুল আরেফিন লিখেন, ‘এই সে...টাই তো সেরের এবং সেরের ছাত্রের কাছে শিখতে চাই। সরি সেন্স।’ ছাত্রদল নেতার এমন মন্তব্য দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে তার পোস্টটিকে এডিট করেন এবং নিজের অভিযোগের কথা জানান। 

এডিট করা পোস্টে তিনি বলেন, ‘একদিকে রাজনীতি প্রোমোট করেন, অন্যদিকে নিষিদ্ধ। নোটটুকু এডিট করে দিলাম, নারী ও হিজাবের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা হতে পারে। এডিট হিস্ট্রিতে ডিটেইলস দেখে নিতে পারবেন। নারী ও তাঁর ধর্মী স্বাধীনতায় আমার আজন্ম শ্রদ্ধা।’

শামসুল আরেফিনের পোস্টের সমালোচনা করে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘তথাকথিত প্রগতিশীল নারীবাদীরা এখন কই গেছে? এসব নিয়ে তো তাদের কোন আওয়াজ দেখছি না। নাকি দাড়িওয়ালা পুরুষ আর হিজাব পরিহিত নারীকে নিয়ে যাচ্ছে তাই বলা বৈধ? এ কমেন্টের মাধ্যমে পুরো নারী জাতিকে অপমান করা হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান লেখেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন ইদানীং একটু বেশি বুদ্ধিজীবী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। এটা করতে গিয়ে কখনো তিনি জোকার হয়ে যাচ্ছেন, কখনোবা অসভ্যতাও করছেন। কোনটা রাজনীতি আর কোনটা অভদ্রতা, এই তফাৎটা তিনি বুঝছেন না। নেহাৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের জন্য কোন জায়গায় মকারি করা উচিত, কোন জায়গায় করা উচিত না- এই সেন্সটুকুও দিন দিন ওনার লোপ পাচ্ছে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘ভিসির সাথে ছাত্রশিবির এমনকি ছাত্রদলও এমন সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে। সেসব ছবি ব্যবহার না করে এই ছবিটাই ব্যবহার করল? নারীকে হীন দেখানোর এই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা অবশ্য উমামা-মেঘমল্লার কিংবা তথাকথিত নারীবাদীরা দেখবে না। কারণ এখানে হিজাবীরা ছিল।’

সমালোচনার জবাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘এটি হিজাবের বিরুদ্ধে কটুক্তি নয়। সেটি অন্যভাবে চালিয়ে দিয়ে নারী আর বোরখার ওপর নেয়ার চেষ্টা এক ধরনের দুষ্টুমি। আমরা এসব দুষ্টু রাজনীতি ছাড়ার আহবান জানাই। আমি আমার পোস্টে ছাত্র-শিক্ষকের কথা স্পষ্ট উল্লেখ করেছি।’

এ বিষয়ে শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘নারী শিক্ষার্থীদের হিজাব নিয়ে এমন কটূক্তিমূলক কথা বলা জাহেলিয়াতের চরমতম বহিঃপ্রকাশ। পর্দা করা মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো মুসলিম পরিবারের মানুষ এমন মন্তব্য করতে পারেন না। নৈতিকতা বিবর্জিত মানুষের মতো আচরণ একজন গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রনেতার মুখে বেমানান। বামদের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে যারা নিজেকে নব্য ইসলাম বিদ্বেষী প্রমাণ করতে চায়, তাদের জানা উচিত এদেশে ইসলামের শিকড় অনেক গভীরে।’