জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ফ্যাসিবাদী ও আওয়ামী লীগের দোসর উল্লেখ করে তাদের নিবন্ধন বাতিল এবং দেশে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ২৯টি রাজনৈতিক দল।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর শাহবাগে গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে তিন দাবিতে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে এ দাবি জানান দলগুলোর নেতারা।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অপরাধ করেছে, জাতীয় পার্টিও একই অপরাধ করেছে। সুতরাং এদেরকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতকে আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের রাজনীতি কোথায় যাবে, আমাদের দেশ কোথায় যাবে, সেই সিদ্ধান্ত নেব আমরা।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, ‘সম্প্রতি অনেকেই অনেক স্বপ্ন দেখছে। আমরা লক্ষ করছি, অনেকেই ভাবছেন জাতীয় পার্টি দিয়ে আবার এসে পড়বে। অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখতে কিন্তু বাধা নেই। তবে একটা কথা মনে রাখবেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা চ্যাপ্টার ক্লোজড। এই চ্যাপ্টার আর খোলার সুযোগ নেই। জনগণের ধাওয়ায় পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার আর ফিরে আসার কোনোরকম নজির নেই।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার তো পালিয়ে গেছে, এখন তো স্বৈরাচার নেই। তাহলে নুরুল হক নুরকে রক্তাক্ত করেছে কারা? আমরা বারবার বলেছি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনের স্তরে স্তরে হাসিনার আন্ডা-বাচ্চা রয়ে গেছে। সরকারকে বলেছি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। ব্যবস্থা কিছু কিছু হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়নি। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা হয়েছে, এলোপ্যাথি চিকিৎসা হয়নি।’
সমাবেশে উপস্থিত রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এখানে আমরা যারা আছি, বিভিন্ন পলিটিক্যাল পার্টি করি। আমাদের মধ্যে চিন্তা-ভাবনার পার্থক্য আছে, আদর্শগত পার্থক্যও আছে, আমরা পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলি, এটি সত্য। এটি তো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু একটি জায়গায় আমরা কিন্তু সবাই এক, সেটি হলো, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে আমরা সবাই এক—এক শরীর এক মন, এক রক্ত এক জায়গা। ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে আর আমরা ফিরতে দেবো না।’ ফ্যাসিস্টদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সোহেল বলেন, একটি কথা মনে রাখবেন, ওই স্বপ্নের (ফিরে আসার) বাস্তবায়ন যদি বাংলাদেশে করতে আসেন বা রাস্তায় নামেন, আমরা কিন্তু আর হাত গুটিয়ে বসে থাকবো না।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘এই হামলা শুধু নুর বা গণঅধিকার পরিষদের ওপর হামলা ছিল না, বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও জুলাই বিপ্লবের ওপর হামলা। তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদকে যারা শক্তি যুগিয়েছে সেই জাতীয় পার্টির বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের প্রতি ওয়াদা করছি, আমরা আজকে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ আছি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আগামীতেও ঐক্যবদ্ধ থাকব, ইনশাআল্লাহ।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘ভেবেছিলাম-৫ আগস্ট বিপ্লব-পরবর্তী ইন্ডিয়ার দোসরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ব, কিন্তু আমরা কী দেখতে পাই? মর্মান্তিক একটি অবস্থা। নুরের ওপরে হামলার পেছনে একটি গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে, এই ষড়যন্ত্র করেছে শেখ হাসিনার দোসররা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের পতন হয়েছে, কিন্তু ফ্যাসিবাদের পতন হয়নি। এই ফ্যাসিবাদ, আওয়ামী লীগ যাতে আর কোনোদিন বাংলাদেশ আসতে না পারে, সে জন্য আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ বলেন, ‘জুলাই গণআন্দোলনে আমরা সফল হয়েছি। এর একমাত্র কারণ ছিল ঐক্যবদ্ধ ছিলাম আমরা। কিন্তু এখন আমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। জাতীয় পার্টি পতিত আওয়ামী লীগের ’১৪, ’১৮ এবং ’২৪-এর ডামি নির্বাচনের সহযোগী ছিল। তারা কোনোভাবেই এদেশে আর রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। তাদেরকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’
সংহতি সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন: জেএসডির কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভুঁইয়া, জমিয়তের গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, এনডিএমের মোহাম্মদ মোমিনুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মোহাম্মাদ মুনতাসির আলী, এনডিপির একাংশের কারী আবু তাহের, অপরাংশের আবদুল্লাহ আল হারুন সোহেল, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) খোকন চন্দ্র দাস, জনতার অধিকার পার্টির তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, পিএনপির ফিরোজ মাহমুদ লিটন, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মামুন প্রমুখ। সমাবেশে এনপিপির যুগ্ম মহাসচিব মো. ফরিদ উদ্দিনসহ গণঅধিকার পরিষদ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
তিন দাবি হলো:
- গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলায় জড়িতদের শাস্তি;
- আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের বিচার;
- নিবন্ধন বাতিল ও রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ব্যর্থতার দায়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন