কয়েক দফা বৈঠকের পর জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি, বাস্তবায়নসহ এর ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ চার দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) আটটি রাজনৈতিক দল যুগপৎ কর্মসূচি শুরুর বিষয়ে একমত হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে যুগপৎ কর্মসূচি শুরু হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে, শিগগির পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে দলগুলো অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
তাদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা এবং ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টি (জাপা) ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
খেলাফত মজলিস সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল রোববার সংবাদ সম্মেলন করে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে তারা। পাশাপাশি অন্য দলগুলোরও শিগগির কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে।
আগামী সোমবার পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচির ঘোষণা করবে ইসলামী আন্দোলন। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এই যুগপৎ কর্মসূচিতে যুক্ত হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস, নূরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদ, মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি ও সরওয়ার কামাল আজিজীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসহ কিছু বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দলের একধরনের বোঝাপড়া রয়েছে। জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের একজন নেতা কয়েকটি দলের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচির সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চায়। অন্য কয়েকটি দল সরাসরি গণপরিষদ নির্বাচনের কথা না বললেও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে একমত। বিভিন্ন দলের সঙ্গে এটিসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আমাদের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। অভিন্ন ইস্যুতে যুগপৎ আন্দোলনের আলোচনাও আছে। বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, তারা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময় অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন চান এবং তা জুলাই সনদের ভিত্তিতে চান।
তবে পিআর পদ্ধতি নিয়ে আট দলের মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। কেউ সংসদের নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ উভয়ক্ষেত্রে পিআর চান, আবার কেউ কেবল উচ্চকক্ষেই পিআর চান। ফলে দলগুলো নিজেদের মতো করে পিআরের দাবি উপস্থাপন করবে।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আট দলের নেতারা একমত হয়েছেন। তাদের মতে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলে ফ্যাসিবাদের দোসর জাপা ও ১৪–দলীয় জোটভুক্ত দলের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ হওয়া উচিত।
জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপিসহ কয়েকটি দল এর আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন ও মৌলিক সংস্কারের দাবি জোরালোভাবে তুলেছিল। এবার তারা আটদলীয় জোটে অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামতে চলেছে।