বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশের শ্রমিকসমাজকে ন্যায় ও ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, আওয়ামী-ফ্যাসিবাদী অপশাসন ও দুঃশাসন থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে ছাত্র-জনতার সঙ্গে শ্রমিকসমাজ রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে মিরপুর-১০, সেনপাড়া পর্বতা ঈদগাহ মাঠে ঢাকা-১৫ আসনের আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আগস্ট বিপ্লব হঠাৎ ঘটেনি। এর জন্য অনেক ত্যাগ ও কুরবানি প্রয়োজন হয়েছে। ছাত্র, তরুণ-যুবক ও শ্রমিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের কাছে স্বৈরাচারি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে বাধ্য করা হয়েছে। অনেকেই রাজপথে জীবন দিয়েছেন, হাজারো মানুষ আহত বা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি ও জীবিকার অনুসঙ্গ হারিয়েছেন। বহু মানুষকে ভিটে থেকে উৎখাত করা হয়েছে। বিরোধী মতের লোকজনকে বাড়িঘর ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে আশ্রয়হীন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের এক হাজার শহীদ আমাদের তালিকায় আছে, যার ৬০ শতাংশ শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। অন্যরা ৪০ শতাংশ। অধিকাংশ শ্রমিকই প্রান্তিক শ্রেণির। দেশের ক্রান্তিকালে শ্রমিকসমাজ সবসময় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। তাই ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় শ্রমিকদের ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিচ্ছে না। সনদকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিলে বিপ্লব ও বিপ্লবীদের যথাযথ সম্মান নিশ্চিত হবে। সরকারের ব্যর্থতার কারণে আবারও তাদেরকে রাজপথে নামতে হচ্ছে। যারা দাবিতে অবস্থান নিয়েছে, তাদের সাথে সরকারের আচরণ আমাকে লজ্জিত ও ব্যথিত করেছে। জনগণ এ বিষয়ে আর কোনো টালবাহানা মেনে নেবে না।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘জুলাই বিপ্লব-পূর্ব বাংলাদেশে মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, লুটপাট ও জুলুমবাজীতে দেশ ছেয়ে ছিল। ফ্যাসিবাদের পতনের পরও অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণকে শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে পারেনি।’
জামায়াতের ওপর আওয়ামী সরকারের জুলুম ও নির্যাতনের কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জামায়াত একটি মজলুম সংগঠন। পতিত সরকারের আমলে তাদের ওপর ব্যাপক জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়েছে। এমন ঘটনা ভারতীয় উপমহাদেশে এবং দেশের অতীতে কখনো দেখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদীরা জামায়াত নিষিদ্ধ করেছিল, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি; বরং ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।’
ডা. শফিকুর রহমান শ্রমিক সমাজকে আহ্বান জানান, ‘দীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ থাকুন।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মুসা, সঞ্চালনা করেন ঢাকা-১৫ আসনের সদস্য সচিব ও মিরপুর পূর্ব থানার আমির শাহ আলম তুহিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি লস্কর মোহম্মদ তসলিম এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য শহিদুল্লাহ, শ্রমিক কল্যাণের সেক্রেটারি আতিকুর রহমান, কাফরুল দক্ষিণ থানা আমির আনোয়াররুল করিম, মহানগরী যুব বিভাগের সভাপতি ডা. মো. মঈন উদ্দিন, কাফরুল উত্তরের আমির রেজাউল করিম মাহমুদ, কাফরুল পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত আমির আতিক হাসান, মহানগরী মজলিসে শুরা সদস্য মু. আবু নাহিদ, কাফরুল উত্তর থানা সেক্রেটারি আশিকুর রহমান, মহানগরী যুব বিভাগের সহসভাপতি খান হাবিব মোস্তফা, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কাফরুল জোন পরিচালক মিজানুর রহমান এবং শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন