বিগত ১০ মাসের ঘটনাপ্রবাহে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছিল বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলটি ‘আশার আলো’ দেখছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তারা আমাদের পথ দেখাচ্ছেন। আমরা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পথে দেশের যাত্রা শুরু হয়েছে।’
শনিবার (২১ জুন) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘লন্ডনে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তাতে আমরা আশাবাদী হয়েছি। দেশের মানুষ এখন চায়, নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হোক।’
এসময় দেশে একটি নতুন গণতান্ত্রিক ধারার সূচনার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১০ মাসের ঘটনাপ্রবাহে আমরা কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরিয়ে আনার পথে আমরা প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৩১ দফার ভিত্তিতে আমরা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আমরা অনেক বিষয়ে একমত। কিছু বিষয়ে একমত হতে না পারলেও নির্বাচনের পর সংসদে আলোচনার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হবে।’
ঐকমত্য কমিশন গঠন এবং তাতে চলমান আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সংস্কার প্রক্রিয়া জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক হবে।’
সুইস ব্যাংকে কারা জমা রাখল টাকা, জানতে চান ফখরুল
এসময় সুইস ব্যাংকে বিপুল অর্থ কীভাবে জমা হলো এবং কারা এসব অর্থ জমা রেখেছে- এ বিষয়ে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘সুইস ব্যাংকে অনেক টাকা জমা হয়েছে এই বছরের মধ্যে। জানি না টাকাগুলো কার, কখন এবং কীভাবে জমা হলো। তবে সংবাদটি দেখেই মনে হয়, তাহলে কি দেশের কিছুই পরিবর্তন হয়নি?’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘যদি এই টাকা ২০২৪ সালে জমা হয়ে থাকে, তাহলে এটা নিশ্চিতভাবেই ফ্যাসিস্ট আমলে হয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংস করেছে, নির্বাচনব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় কাঠামো, আমলাতন্ত্র সবকিছুই তারা ধ্বংস করেছে।’
সম্প্রতি প্রকাশিত সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশিদের সুইস ব্যাংকে জমা অর্থ ২০২৩ সালের তুলনায় ৩৩ গুণ বেড়েছে। ২০২৩ সালে যেখানে ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯ কোটি সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিবন্ধনের আবেদন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের আগে স্বাগত জানিয়েছি, এখনো জানাচ্ছি। তাদের তরুণ নেতৃত্ব লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।