রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের সমাবেশে বিএনপির কেউ না যাওয়ার প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘দাওয়াত দেয়নি, যাব কীভাবে! দাওয়াত দিলেও যে যেতাম বিষয়টি তেমন না।’
শরিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর বনানীর হোটেল অমনি রেসিডেন্সিতে ‘জুলাই অভ্যুত্থান ও রাজনীতিতে গুজব’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালাইসিস।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে আমরা সবাই এক ছিলাম। ৫ আগস্টের পর সবাই আলাদা হয়ে গেছি। গণতান্ত্রিক রাজনীতির সংগ্রামের বেদনার কথা আমরা সবাই ভুলে গেছি। এখন গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো বিভক্তি হয়ে গেছি।’
তিনি বলেন, এখনো নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা হয়নি। আগলা শুনতে পাচ্ছি হবে হবে ভাব। এখনো নির্বাচন কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টা কোনো নির্দেশনা দিয়েছে বলে আমাদের জানা নাই। সেই অবস্থার মধ্যে সবাই পিআর বলে চিল্লাচ্ছে।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এর আগে পিআরের দাবিতে একটা দল মহাসমাবেশ করেছে। তখন একজন আমাকে বলল তারা কয়টি আসন পেতে পারে, আমি বললাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে যদি একটি আসন হয় তাহলে তারা একটি আসন পেতে পারে। এই কথা যে জিগ্যেস করেছিল তারা আজ সমাবেশ করছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের পলিটিক্যাল কালচারে, ভোটারদের লেভেলে এখনো আমরা ইভিএমে টিপ দেওয়া শেখাতে পারি নাই, অথচ আছি পিআর নিয়ে। পিআরের পদ্ধতি ইলেকশনটা হচ্ছে নিজের ভাগবাঁটোয়ারা। কিন্তু গণতন্ত্রের কী অবস্থা হবে, দেশের স্থিতিশীলতা আসবে কি না, সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কি না, অস্থিতিশীল সরকার হলে দেশের কী অবস্থা হবে সেইটা নিয়ে কারও কোনো চিন্তা নাই।’
এ সময় দলগুলোর ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ ত্যাগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কোনোভাবেই বাংলাদেশে যেন ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান না হয়। আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত মরিয়া প্রমাণ করল, তারা ভারতের লোক। কারণ তারা ভারতের করদ রাজ্য বানানোর জন্য এখানে অনেক চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত তারা একটি জায়গায় অন্তত সফল হয়েছে যে নিজেরা অন্তত ভারতে আশ্রয় পেয়েছে।
‘আওয়ামী লীগকে আমরা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে মনে করি। তারা বাংলাদেশের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশকে শাসন করবে, শোষণ করবে কিন্তু; বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিশ্বাস করবে না। এটা প্র্যাকটিক্যালি প্রমাণ করে দিয়ে তারা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।’
ভারতে গুম থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান না হলে হয়তো ভারতেই মরতে হতো। গুম নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে অপমান করে। যারা গুজব ছড়াই তাদের উপর আমার নসিহত (পরামর্শ) নাই। কারণ তারা মোটিভেট হয়ে এসব করে।’
বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের গুজবের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক
মাহবুব মোরশেদ বলেন, ভারতের প্রোপাগান্ডা সাধারণ বিষয় না। এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা যুদ্ধ চালাচ্ছে। দেশের অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে, ছোট ছোট প্রাতিষ্ঠিতভাবে কিছুটা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এটা পুরোনোভাবে করা কখনোই সম্ভব না। কারণ একটা রাষ্ট্র সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রোপাগান্ডা যুদ্ধ চালাচ্ছে সেটাকে যুদ্ধ হিসাবে না নিয়ে ব্যক্তিগত প্রতিরোধের জায়গায় থেকে দেখলে হবে না।
গুজব রোধে আইনি কাঠামোর প্রয়োজন আছে জানিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসরাফ কায়সার বলেন, গুজবের শাস্তির আগে গুজব কী জানতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখলে বলে গুজব। সরকার যখন আইন করে তখন মনে করতে হবে সরকারের একটা মতলব আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই মতলব জনগণের পক্ষের মতলব না। ওই মতলব সরকারের টিকে থাকার মতলব। হাসিনা আমাদের এটা শিখিয়ে। পরবর্তী যারা সরকারে আসবে তারা যেন হাসিনাকে ছাড়িয়ে না যায়।
ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব রোধে সুনির্দিষ্ট আইনি অবকাঠামো দরকার। এই ধরনের আইন প্রণয়নের আগে বেশি কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। অতিরিক্ত কঠোর কোনো আইন প্রণয়ন করলে আইনের অপব্যবহার হতে পারে। অপব্যবহার করে ভিন্ন মত দমন করা যায়, বাকস্বাধীনতা দমন করা যায়। আইনের পাশাপাশি মৌলিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
ব্রেইনের প্রধান সমন্বয়ক সাদিক মাহমুদ বলেন, মানুষ গুজব খুব আগ্রহ নিয়ে পছন্দ করে। গুজব হচ্ছে চিপস বা চানাচুরের মতো। গুজব আমাদেন সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সংঘাত হলে অনিবার্যভাবে বিপর্য আসবে।
উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক পরামর্শক কমিটির বিশেষ সহকারী ফারজানা শারমিন পুতুল, দ্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সাবেক সিনিয়র হেলথ নিউট্রিশন স্পেশালিস্ট জিয়াউদ্দিন হায়দার, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সহযোগী অধ্যাপক ড. বুলবুল আশরাফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী অধ্যাপক তানভীর হাবিব জুয়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সালমা বেগম প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :