‘কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’ বক্তব্যের জেরে ফজলুর রহমানের পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় দলটির একটি সূত্র তথ্যটি নিশ্চিত করে।
মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদে আছেন। তার বিরুদ্ধে জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ উঠলে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় দলটি।
কিন্তু শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় দল তার পদ স্থগিতের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বলে বিএনপির সূত্রটি জানায়।
ফজলুর রহমান বলেছেন, তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব মঙ্গলবার বিকেল ৪টার মধ্যে দিতে বলা হয়েছিল। তার প্রতিনিধি বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নয়াপল্টন কার্যালয়ে গিয়ে জবাব জমা দেন। এ সময় জবাব দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়ায় তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।
লিখিত জবাবে ফজলুর রহমান উল্লেখ করেন, তিনি কখনোই জুলাই আন্দোলন নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বা বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেননি। বরং জুলাই–আগস্টের শহীদদের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছেন। তার দাবি, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ আবু সাইদ হত্যার পর তিনিই প্রথম তাকে একুশ শতকের ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ আখ্যা দেন।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি একজন দৃঢ় বিশ্বাসী মুসলমান এবং ইসলাম ও আল্লাহ–রাসুলের প্রতি তার অবিচল আস্থা রয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মকে ব্যবসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে তিনি অতীতে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েছেন, ভবিষ্যতেও নেবেন।
তিনি আরও বলেন, কোটা আন্দোলনের সময় ছাত্রদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নিতে তিনি উৎসাহিত করেছিলেন। জুলাই আন্দোলন ও বিএনপির দীর্ঘ সংগ্রামে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জামায়াত–শিবির নিজেদের ‘জুলাই আন্দোলনের ভ্যানগার্ড’ দাবি করে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করছে।
ফজলুর রহমানের দাবি, তিনি মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকারের প্রবণতার বিরুদ্ধে সবসময় কথা বলেছেন এবং জামায়াত–শিবিরকে ‘কালো শক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার অভিযোগ, বিএনপি দীর্ঘদিন আন্দোলনের জমি তৈরি করেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফসল কেটে নিয়েছে জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা।
জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, তার বক্তব্য যদি কখনো ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে থাকে তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করতে প্রস্তুত। দলের ক্ষতি হবে এমন কোনো কাজ তিনি কখনো করেননি এবং ভবিষ্যতেও করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। একই সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে দলের স্বার্থে সব সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা জানান তিনি।