বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির জননেতা মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, নির্বাচন যত দ্রুত হবে জামায়াতে ইসলামী ততই উপকৃত হবে।
তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো টালবাহানা চলবে না, করতে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫ দফা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার সুযোগ নেই। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে এখনো ৫ মাস সময় আছে। ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য একমাসই যথেষ্ট।’
সোমবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা-১০ আসনের রাজধানীর কাঁটাবন (বাটা সিগন্যাল) এলাকায় দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে গণসংযোগ পূর্বক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘৫ দফা বাস্তবায়ন না হলে পরবর্তী যারাই সরকার গঠন করবে তারা আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করবে। একটি দল জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তারা মূলত চায় না, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হোক।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া হলে, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে তারা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে পারবে না। এ জন্য তারা অন্তবর্তীকালীন সরকারকে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানে সহযোগিতা করছে না।’
জামায়াত নেতা বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করেনি। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং জুলাই যোদ্ধারা। জুলাই সনদ বাস্তবায়িত হলে জাতি নতুন বাংলাদেশ পাবে। নতুবা জাতি বিপর্যস্ত হবে, আবারও বাংলাদেশ পথ হারাবে।’
ভোটারদের যথাযথ মূল্যায়নের জন্য পিআর পদ্ধতির বিকল্প নেই উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘প্রচলিত পদ্ধতিতে দেখা যায়, মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে একজন প্রার্থী বিজয়ী হয়, অপরদিকে ১ ভোটের ব্যবধানে লাখ লাখ ভোট নষ্ট হয়েছে। লাখ লাখ ভোটারের মতামতের কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকে না।’
বুলবুল বলেন, ‘প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতিতে সত্যিকারের জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় না, জনগণের সরকার গঠিত হয় না। পিআর পদ্ধতিতে প্রতিটি ভোটারের মতামত মূল্যায়িত হয়ে সত্যিকারের জনগণের সংসদ ও সরকার গঠিত হয়। ফলে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার সুযোগ নেই। যারা এখন পিআর বুঝে না দাবি করে তারাই সময়ের ব্যবধানে পিআর পদ্ধতির জন্য আন্দোলন করবে।’
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ভারসাম্যের প্রস্তাবে যেই দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (আপত্তি) দিয়েছে তারা চায় আবারও প্রধানমন্ত্রী একক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে একনায়কতন্ত্রের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে। তারা মিডিয়ার সামনে নীতি কথা বললেও বাস্তবে তাদের আদর্শ ও চেতনার সাথে কোনো মিল নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতায় গিয়ে দুই বছর পর জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে বলার অর্থ হচ্ছে শুভঙ্করের ফাঁকি।’ ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে চাইলে ক্ষমতায় যাওয়ার আগে এখন বাস্তবায়নে আপত্তি কেন, প্রশ্ন রেখে তিনি ঐ দলকে জাতির সামনে প্রশ্নের জবাব দিতে আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট হিসেবে যতটা অপরাধী তার দোসর ১৪ দলও ততটাই অপরাধী দাবি করে নূরুল ইসলাম বুলবুল অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।
জামায়াত নেতা বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি’, ‘পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচন’, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চতকরণ’, করার এই ৫ দফা বাস্তবায়িত হলে জুলাই চেতনা বাস্তবায়িত হওয়ার পথ তৈরি হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গণমানুষের ৫ দফা মেনে নিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে তিনি আহ্বান জানান।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন