ঢাকা সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে : গোলাম পরওয়ার

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৭:২৩ পিএম
কথা বলছেন জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘বিচার স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানে সম্পন্ন হয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। দেশবাসী ন্যায়বিচার পেয়েছে। যদিও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ পুরোপুরি হয়নি, তারা কিছুটা স্বস্তি লাভ করেছে।’

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শেখ হাসিনার মামলার রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহকারী সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এটিএম মা’ছুম, ড. হামিদুর রহমান আযাদ (সাবেক এমপি), মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন এবং ঢাকা মহানগর উত্তরীর আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জামায়াতের সহকারী সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের আজকের রায় বাংলাদেশের বিচার ও রাজনৈতিক ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কারণ, এ দেশে কোনো প্রধানমন্ত্রীকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া এই প্রথম। সরকার বা রাষ্ট্রের কোনো ক্ষমতাধারী ব্যক্তি আইনের ঊর্ধ্বে নয়, তা এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সরকার চৌদ্দ শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে এবং প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষকে গুরুতরভাবে আহত করেছে। এদের অনেকেই চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছে এবং বহু ছাত্র-জনতা চোখ ও হাত-পা হারিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় ছিল- আজ তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, গুম, আয়নাঘর এবং ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যাসহ সকল অপরাধের দ্রুত বিচারও দেশের মানুষের প্রত্যাশা। ইনশাআল্লাহ, এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত সম্পন্ন হবে। বিচারকের রায় পড়ে শোনানোর সময় দেশবাসী জানতে পারল- শেখ হাসিনা কত নিষ্ঠুর ও প্রতিহিংসাপূর্ণভাবে হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন।’

জামায়াত নেতাদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা ও সাজানো মামলা এবং দলীয় লোকদের মাধ্যমে সাজানো সাক্ষীর ভিত্তিতে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। সেই বিচার অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানের ছিল না; দেশ-বিদেশে সর্বত্রই তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আদালত থেকে সাক্ষী গুম করে, স্কাইপ কেলেঙ্কারি ও বিদেশ থেকে রায় লিখে জামায়াতের যেসব নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের আমরা আর কখনো ফিরে পাব না—এটাই সবচেয়ে বেদনাদায়ক।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এটিএম আজহারুল ইসলাম সুপ্রিম কোর্ট থেকে বেকসুর খালাস পাওয়ায় প্রমাণিত হয়েছে—জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে পূর্বের রায়গুলো ছিল অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অন্যায় ও প্রহসনমূলক।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘আজকের রায়কে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা শাটডাউন ঘোষণা করে সারাদেশে ককটেল-বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবে জনগণের তীব্র প্রতিরোধের মুখে তারা কোথাও দাঁড়াতে পারেনি। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। আদালত চত্বর থেকে সাক্ষী গুম করে এসব নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।’

প্রতিবেশী দেশের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী ভারত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে অপরাধীর পক্ষ নেওয়ায় ন্যায়বিচারের পরিপন্থী অবস্থান নিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি মেনে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে আইনের কাছে সোপর্দ করার জন্য আমরা ভারতের প্রতি আহ্বান জানাই।’