গণমাধ্যমের ওপর রাজনৈতিক ও কর্পোরেট প্রভাব, পেশাগত অনিয়ম এবং সাংবাদিকদের দুরবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাতে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এই সমালোচনা করেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা কতটা দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম কখনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র, কখনো কর্পোরেট স্বার্থরক্ষাকারী, আবার কখনো কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হয়ে সংবাদ প্রচার করছে। ফলে প্রকৃত সংবাদ হারিয়ে যাচ্ছে, জায়গা নিচ্ছে চটকদার শিরোনাম ও চরিত্রহননের খবর।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘রাজনীতিতে আসা তরুণ নারী নেত্রীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও চরিত্রহননের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে, যা তাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে অগ্রযাত্রা ব্যাহত করছে। সংবাদ পরিবেশনে সততা ও দায়িত্বশীলতার পরিবর্তে বিভ্রান্তিকর উপস্থাপন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ট্রেন্ড নির্ভর কনটেন্ট এবং উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
পোস্টে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘রাজনৈতিক বক্তব্যের গঠনমূলক অংশ বাদ দিয়ে কেবল একটি শব্দ বা বাক্য হাইলাইট করে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। ডিজিএফআই সরবরাহকৃত তথ্যের ভিত্তিতে গোপন ফুটেজ ব্যবহার করে চরিত্রহনন বা ব্যক্তিগত ঘটনা অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপনের মতো কর্মকাণ্ড সাংবাদিকতার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করছে।’
হাসনাত বলেন, ‘অনেক গণমাধ্যমে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রদর্শনের প্রবণতা দেখা যায়, যা সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থি। অপরদিকে, সাংবাদিকদের আর্থিক অনিশ্চয়তা, নির্ধারিত বেতন কাঠামোর অভাব এবং বেতন-বকেয়া দীর্ঘদিন ধরে একটি কাঠামোগত সংকট তৈরি করেছে। ঢাকায় অনেক সাংবাদিক মাসে মাত্র ৮-১০ হাজার টাকা পান। মফস্বলে অধিকাংশ সাংবাদিক কোনো বেতনই পান না, বরং আইডি কার্ড পেতে উল্টো টাকা দিতে হয়।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপ স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। বিশেষ করে ডিজিএফআই-এর নির্দেশ অমান্য করলে বিজ্ঞাপন বন্ধ, মালিকদের ব্যবসায়িক কাজে বাধা এবং নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। কর্পোরেট নেক্সাসের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের ‘মিডিয়া সন্ত্রাস’-এর কথাও তিনি উল্লেখ করেন।’
হাসনাতের মতে, জনগণের আস্থা হারালে কোনো গণমাধ্যম বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। আস্থা পুনরুদ্ধারে গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক ও কর্পোরেট প্রভাবমুক্ত করা, ওয়েজবোর্ড কার্যকর করা, বেতন-বকেয়া নিয়মিত প্রদান এবং সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের জন্য ভয়ভীতিমুক্ত কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, হামলার বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং গণমাধ্যম মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।’
পোস্টের শেষে তিনি মালিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘গণমাধ্যম জনগণের, এটি আপনাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। সাংবাদিকদের ন্যায্য অধিকার হরণ করে, সত্য গোপন করে আর ক্ষমতার তোষামোদ করে বেশি দিন টিকে থাকা সম্ভব নয়।’