শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে ২৯৩ আসন ছিনিয়ে নিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা সারোয়ার তুষার।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।
পোস্টে সারোয়ার তুষার লেখেন, “বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়াতে না পারার সম্পূর্ণ দায় শেখ মুজিব ও আওয়ামীলীগকে নিতে হবে। তার করুণ পরিণতির দায়ও একান্তই তার ও তার দলের। তাকে অনেকে পরামর্শ দিয়েছিলেন (যেমন প্রফেসর রাজ্জাক)—‘আপনি যথার্থ স্টেটসম্যানের মতো বিরোধী দলসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলেন।’ শেখ মুজিব এ ধরনের পরামর্শ বিন্দুমাত্র আমলে নেন নাই। ৭৩ সালে ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে ২৯৩ আসন ছিনিয়ে নিয়েছিলেন।”
তিনি লেখেন, ৭০ সালে পাকিস্তানের সংবিধান বানানোর জন্য নির্বাচিতদের দিয়ে স্বাধীন দেশে অনির্বাচিত গণপরিষদ বসিয়েছেন। ‘৭০-এর নির্বাচন আওয়ামীলীগ করেছিল ৬ দফার ভিত্তিতে। সেখানে বাহাত্তরের সংবিধানের ওই চার মূলনীতি ছিল না। অথচ স্বাধীন দেশের সংবিধানে ওই চার মূলনীতিই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
তুষার লেখেন, আবুল মনসুর আহমদসহ অনেকেই স্পষ্ট করেছেন, ওই চার মূলনীতির জন্য এ অঞ্চলের মানুষ ঐতিহাসিক সংগ্রাম করে নাই। বাহাত্তরের সংবিধান এমনভাবে ক্ষমতা একব্যক্তি ও দলে কেন্দ্রীভূত করে যে, শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের সকল পথ বন্ধ হয়ে যায়৷ ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত কোনো সরকারি দলকে বাধ্য করা ছাড়া ক্ষমতা থেকে নামানো যায় নাই। এ কারণে এ দেশে বারবার পজিটিভ অর্থে গণঅভ্যুত্থান, নেগেটিভ অর্থে সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়।
তিনি লেখেন, বাহাত্তরের সংবিধানের ভাবাদর্শিক ক্ষমতা (চার মূলনীতি) এবং কাঠামোগত একব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতা এমন এক একচেটিয়া ক্ষমতা কায়েম করে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে দলীয়করণ করে যে, বলপ্রয়োগের মাধ্যমে যখন ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতাচ্যুত হয় তখন এক বিরাট ভারসাম্যহীনতা ও শূন্যতা তৈরি হয়।
সারোয়ার তুষার লেখেন, অথচ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমনকি গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে কোনো দলের বিদায় হলে রাষ্ট্র ঠিকই স্থিতিশীল থাকে। কারণ সেখানে প্রতিষ্ঠান ও ক্ষমতার ভারসাম্য থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রে সেই জিনিস থাকে না। ফলে প্রত্যেকবার বড় ধরনের পালাবদলের পর বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয় এবং এর সুযোগ নিয়ে এখানে বারবার সামরিক হস্তক্ষেপ হয়।
তিনি লেখেন, দেখেন একটা গণঅভ্যুত্থানের পরও কার্যকর সংস্কারের অনিশ্চয়তা ও মীমাংসার অভাবে এখনো আমাদের এক-এগারোর আশঙ্কায় থাকতে হচ্ছে। এমন যে হবে তা বদরুদ্দীন উমর বাহাত্তর সালেই টের পেয়েছিলেন। তিনি তখনই হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, বাহাত্তরের সংবিধান এক স্থায়ী জরুরি অবস্থা কায়েম করবে। কার্যত তা-ই হয়েছে। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, কোনো কারণে শেখ মুজিব ক্ষমতাচ্যুত হলে সেই শূন্যস্থানে একমাত্র সংগঠিত শক্তি হিসেবে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করবে। সেটাই হয়েছে৷
এনসিপির এই নেতা লেখেন, বাংলাদেশের সামরিক শাসন ও হস্তক্ষেপের পেছনে বাহাত্তরের সংবিধানের একচেটিয়া ক্ষমতাতন্ত্র এবং তা থেকে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শূন্যতা দায়ী। এই সংবিধানই সামরিক শাসনের পথ প্রশস্ত করেছে। এটাকে বহাল রেখে কোনোভাবেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়া সম্ভব হবে না।
সারোয়ার তুষার লেখেন, বাহাত্তরের সংবিধানই বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক সংকটের মূলে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নামে একে টিকিয়ে রেখে বাংলাদেশের সমস্যা দূর হবে না। আওয়ামীলীগের খেলাধুলাও বন্ধ হবে না। আওয়ামীলীগের দেশবিরোধী সন্ত্রাসবাদের অবসান করতে হলে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান ও রাষ্ট্র অপরিহার্য।