ঢাকা সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

১৫ মাস অনুপস্থিত থেকেও মাদ্রাসার বিল তুলছেন সুপার

আরিফ হোসেন, চরফ্যাশন (ভোলা)
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৭:০২ পিএম
চরমোতাহার দাখিল মাদ্রাসা ও মাদ্রাসাটির সুপার মাওলানা মো. ফখর উদ্দিন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট থানার মুজিবনগর ৩ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত চরমোতাহার দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. ফখর উদ্দিন ১৫ মাস ধরে মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত বেতন ও বিল উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার অনুপস্থিতি মাদ্রাসার শিক্ষার পরিবেশে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষের কারণ হয়েছে।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্থানীয়দের চাপের মুখে সুপার ফখর উদ্দিন মাদ্রাসায় আসা বন্ধ করেন। তখন থেকেই তিনি অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বিল তুলছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরকারি বরাদ্দ আত্মসাত, শিক্ষার্থীদের ফি বাড়ানো এবং স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের প্রায় অর্ধশত একর জমি জবর দখলসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।

সরজমিনে গিয়ে সুপারের দেখা মেলেনি। তবে অন্যান্য শিক্ষক জানান, মাদ্রাসার সুপার গত ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। তিনি একদিনও মাদ্রাসায় আসেননি। মাদ্রাসায় সুপার ফখর উদ্দিন অনুপস্থিত থেকেও কিভাবে বিল তুলছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই মাদ্রাসার সহকারী সুপার মাওলানা হারুনুর রশিদ বলেন, ‘তিনি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মাদ্রাসায় উপস্থিত নেই। তবে তিনি কিভাবে বিল তুলছেন, সেটা আমার জানা নেই।’

এ ছাড়া শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় দেখা যায়, ১৫ মাস অনুপস্থিত থেকে হাজিরা খাতায় সুপারের ৫ মাসের স্বাক্ষর রয়েছে। তবে এর মধ্যে অধিকাংশে ইংরেজিতে ‘ঢাকা’ ও বাংলায় ‘চরফ্যাশন’ শব্দ লেখা রয়েছে। তিনি কিভাবে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়েছেন?

এই বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার পদে কর্মরত তার জামাতা মো. নওশান বলেন, ‘তিনি গোপনে বাসায় এসে একদিনেই হাজিরা বইতে পুরো মাসের স্বাক্ষর দিয়েছেন।’

মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা মাদ্রাসায় নিয়মিত আসি। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানে সুপারকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেখতে পাইনি।

স্থানীয় মিজানুর রহমান জানান, আওয়ামী লীগের আমলে চর মোতাহার দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা ফখর উদ্দিন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়ালখুশি মতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। এমনকি তিনি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত অশোভনীয় আচরণ করতেন। সাবেক এক ইউএনও-এর স্বাক্ষর জাল করে তার এক মেয়ে ও মেয়ের জামাতাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। 

এ ছাড়া তিনি স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের প্রায় অর্ধশত একর জমি তার এক প্রভাবশালী আত্মীয়ের পরিচয়ে নিজের দখলে নিয়েছেন। সেজন্যই ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকা ছাড়া ছিলেন। এমনকি মাদ্রাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছেন।

মাদ্রাসার সুপার মাওলানা ফখর উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার সঙ্গে স্থানীয় একটি গ্রুপ ঝামেলা করতেছে। এ কারণে মাদ্রাসায় উপস্থিত হতে পারিনি।’

তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি যদি আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন, তাহলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ সংবাদ সম্মেলন করব।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, ‘মাদ্রাসার সুপার ফখর উদ্দিন টানা ১৫ মাস মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থেকে বেতন উত্তোলন করার কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া তিনি তার অনুপস্থিতির বিষয়টি আমাকে অবগত করেননি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি বলেন, ‘মাদ্রাসা সুপারের অনুপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে মৌখিকভাবে একটি গুরুতর অভিযোগ পেয়েছি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সত্যতা যাচাই পূর্বক তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’