সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদের একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হলেও, এ নিয়ে দুই পক্ষই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। আদর্শিক মিল থাকা সত্ত্বেও নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সমঝোতার অভাবে তাদের একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া শেষপর্যায়ে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চপরিষদ সদস্য ও দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, গণঅধিকার পরিষদ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একীভূত হবে না এবং এনসিপির সঙ্গে একীভূত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
একই প্রসঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য আবু হানিফ বলেন, ‘মানুষের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। আমাদের দল বিলুপ্ত করে নতুন জন্ম নেওয়া এনসিপিতে যোগদানের সুযোগ নেই।’
অন্যদিকে, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এনসিপি নেতাদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘এনসিপি নেতাদের আচরণ দেখে মনে হয়, তারা সরকার গঠনের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে এবং আমাদের যেন মন্ত্রী-টন্ত্রী হওয়ার আশায় তাদের পেছনে লাইন ধরতে হয়।’
নুর আরও বলেন, ‘আমার দেখা সাক্ষাৎকার ও অভিজ্ঞতা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, এনসিপির একটি অংশ তাদের নেতৃত্ব বজায় রাখতে চান এবং চান না যে এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদ একীভূত হোক।’
এর আগে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলে বৈঠকের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। নুর চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলেও এখনো দুই দলকে আলোচনার টেবিলে বসতে দেখা যায়নি।
অন্যদিকে, এনসিপির মধ্যেও একীভূত হওয়ার বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। দলের অনেক নেতা বিভিন্ন সময়ে মন্তব্য করলেও একীভূত হওয়ার প্রসঙ্গে জোরালো কোনো বক্তব্য দেননি।
এনসিপির একাধিক নেতা সংবাদমাধ্যমকে সরাসরি জানিয়েছেন, তারা গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে একীভূত হচ্ছেন না। পুরো দল যদি একসঙ্গে আসে, তবে তাদের কীভাবে অ্যাকোমোডেট করা যাবে সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হতে পারে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন একীভূত প্রসঙ্গে বলেন, ‘এনসিপির কেউ অন্য কোনো দলের সঙ্গে যাওয়ার পরিকল্পনা করেনি। কেউ যদি এনসিপিতে আসতে চায়, আমরা সর্বদা তাকে স্বাগত জানাই। গণঅধিকার পরিষদ আমাদের কাছে আগ্রহ দেখিয়েছিল।’
এর আগে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘অভ্যুত্থান ও রাজপথের আন্দোলনে গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি একসঙ্গে কাজ করেছে। মানুষ চায় এই দুটি দল একসঙ্গে থাকুক। এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।’
তবে নেতৃত্বের ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকেই যাচ্ছে। এনসিপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার মতে, কে নেতৃত্বে থাকবেন, কার অবস্থান কোথায় হবে এ বিষয়ে এখনো সমঝোতা হয়নি। তাই একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়াটি আপাতত চ্যালেঞ্জের মুখে।
বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, নেতৃত্ব ও অবস্থান নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং পারস্পরিক আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতার ঘাটতি দুই দলের একীভূত হওয়ার পথে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূতরাং একীভূত হওয়ার বিষয়টি সঠিক ফল নাও আনতে পারে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন