আট মাস আগে আত্মপ্রকাশ করা বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) এখন নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করেছে- ‘জাতীয় ছাত্রশক্তি’। নিহত ছাত্রনেতা মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আক্তার সেবন্তি সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই নাম ঘোষণা করেন। তবে এদিন সংগঠনটির কোনো নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক জাতীয় সম্মেলনে সংগঠনটির নতুন নাম ঘোষণা করা হয়।
নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি সংগঠনটির স্লোগানেও এসেছে পরিবর্তন। আগে যেখানে বাগছাসের মূলমন্ত্র ছিল ‘শিক্ষা, ঐক্য, মুক্তি-মুক্তি’, সেখানে নতুন নামের সঙ্গে মিল রেখে এখন সংগঠনটির নতুন স্লোগান হয়েছে ‘স্টুডেন্ট ফাস্ট, বাংলাদেশ ফাস্ট’। নেতারা জানিয়েছেন, নতুন এই স্লোগানের মাধ্যমে তারা শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে সর্বাগ্রে রেখে দেশের কল্যাণে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে বাগছাস। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’–এর কয়েকজন সাবেক নেতার উদ্যোগে সংগঠনটি গঠিত হয়। শুরুতে তারা নিজেদের স্বাধীন ছাত্রসংগঠন হিসেবে উপস্থাপন করলেও বাস্তবে এটি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–র সহযোগী সংগঠন হিসেবেই কাজ করছিল। আট মাস পার হলেও প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়ায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভরাডুবির পর সংগঠনটির পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এনসিপির পক্ষ থেকেই নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব আসে, যা গতকাল বৃহস্পতিবারের সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, এবং সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। এছাড়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামকেও সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বক্তব্যে আখতার হোসেন বলেন, ‘দল যদি কখনো ভুল পথে যায়, ছাত্ররাই সেই ভুল ধরিয়ে দেবে। প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আমাদের অঙ্গীকার। দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে ছাত্রসমাজের উপর।’
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘মানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষা পূরণে ছাত্রদেরই সামনে আসতে হবে। নতুন প্রজন্মই রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করবে।’
অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘যারা ব্যক্তিস্বার্থে লিপ্ত, তাদের জন্য এনসিপির কোনো সংগঠনে জায়গা নেই। গণতন্ত্রের দীর্ঘ যাত্রায় ছাত্ররাই জনগণের শক্তি হয়ে উঠবে।’
নতুন নাম ঘোষণার মাধ্যমে ‘জাতীয় ছাত্রশক্তি’ এখন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–র সহযোগী ছাত্রসংগঠন হিসেবে কাজ করবে।
সংগঠনটির নেতারা জানান, ভবিষ্যতে তারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভয়ের সংস্কৃতি দূর করা, শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।
নেতাদের আশা, নতুন নাম ও দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবারও আগ্রহ ও উদ্দীপনা তৈরি করবে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।


