ঢাকা শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫

স্ত্রীর ফোন নম্বর ‘মোটু’ নামে সেভ, অতঃপর ডিভোর্স

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৫, ০২:৫২ পিএম
স্বামী-স্ত্রী। ছবি- সংগৃহীত

তুরস্কে এক ব্যক্তি তার প্রাক্তন স্ত্রীর ফোন নম্বর ‘চবি’ (তুর্কি ভাষায় যার অর্থ ‘মোটা’ বা ‘গুলুমুলু’) নামে সেভ করার অভিযোগে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ওই মোটু শব্দটি ব্যবহার করায় স্ত্রীকে মানসিকভাবে আঘাত করেছে এবং বিবাহিত জীবনের অবনতিতে ভূমিকা রেখেছে। ফলে আদালত স্বামীকে তার প্রাক্তন স্ত্রীকে মানসিকভাবে আঘাত দেওয়া কারণে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

পশ্চিম তুরস্কের উশাক শহরের এই ঘটনা এখন দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই নারী অভিযোগ করেন, তার স্বামী বারবার তাকে হুমকিমূলক বার্তা পাঠাতেন, যেমন— ‘দূরে যাও, তোমাকে দেখতে চাই না’ এবং ‘শয়তান তোমার মুখ দেখুক।’ এমনকি তিনি স্ত্রীর কাছ থেকে তার বাবার অস্ত্রোপচারের খরচ বাবদ টাকাও দাবি করেছিলেন।

সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল, স্বামীর ফোনে স্ত্রীর নাম ‘তোম্বিক’ (Tombik) হিসেবে সেভ করা। এই শব্দের অর্থ ‘মোটা’। আদালতে ওই নারী দাবি করেন, এই নাম তাকে অপমান করেছে এবং তাদের সম্পর্কের প্রতি অবমাননা দেখিয়েছে।

শুনানি শেষে আদালত একমত হয়ে জানায়, স্ত্রীর নম্বর এমন নামে সেভ করা এবং অপমানজনক বার্তা পাঠানো ‘মানসিক ও অর্থনৈতিক সহিংসতা’র শামিল।

আদালত রায়ে  জানিয়েছে, স্বামীর আচরণে স্ত্রী স্পষ্টতই মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই স্ত্রীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তবে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ প্রকাশ করা হয়নি।

অন্যদিকে, স্বামী দাবি করেন, তার স্ত্রী অন্য এক পুরুষকে বাড়িতে এনেছিলেন। কিন্তু তদন্তে জানা যায়, ওই ব্যক্তি কেবল একটি বই পৌঁছে দিতে এসেছিলেন এবং তাদের মধ্যে কোনো অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ মেলেনি। ফলে আদালত পরকীয়ার অভিযোগ খারিজ করে দেন।

তুর্কি দণ্ডবিধি অনুযায়ী, কারও সম্মান বা মর্যাদা আঘাত করে এমন ভাষা বা আচরণের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। আদালতের এই রায় দেশটির আইনে মানসিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ নজির হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ রায়টিকে ন্যায্য বলে উল্লেখ করেছেন, আবার অনেকে বলছেন, ‘মোটা’ শব্দটি অনেক সময় আদর করে বলা হয় বলে মন্তব্য করছেন।

একজন মন্তব্য করেছেন, ‘মোটা বলা সবসময় অপমান নয়, অনেক সময় ভালোবেসেও বলা হয়।’ অন্যজন লিখেছেন, ‘এটা একদম সঠিক রায়। কাউকে অপমান করে ভালোবাসা যায় না।’ আরেকজন মজা করে লিখেছেন, ‘এখনই আমার ফোনের কনট্যাক্টগুলো চেক করব, যেন কোনো আপত্তিকর নাম না থাকে!’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায় তুরস্কে পারিবারিক সহিংসতা ও মানসিক নির্যাতন নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে। আদালতের মতে, ভালোবাসার সম্পর্কেও সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা সমানভাবে জরুরি।