বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মেহেদী হাসান/ফাতিন ইশরাক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪, ১২:৫৮ পিএম

ছাত্রশিবিরে অনুপ্রবেশের গুঞ্জন

কৌশলে দল বদলাচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা

মেহেদী হাসান/ফাতিন ইশরাক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪, ১২:৫৮ পিএম

কৌশলে দল বদলাচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দলবদলের খেলায় মেতেছে সুবিধাবাদীরা। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নানা কর্মকাণ্ডে বিক্ষুব্ধ জনসাধারণ। ফলে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নানা কৌশলে দল বদলাতে দেখা যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ছাত্র রাজনীতিতে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে দলবদলের জন্য প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্রলীগের পদধারী নেতাকর্মীরা বর্তমানে ‘চুপিসারে’ ছাত্রশিবিরের সঙ্গে মিশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সুবিধাবাদীদের এমন দলবদল অদূর ভবিষ্যতে দেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। তাদের মতে, দেশে পটপরিবর্তনের পর ছাত্রশিবির যেহেতু ছাত্ররাজনীতির মূলধারায় উন্মুক্তভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে চাচ্ছে, সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিজ দলে অন্তর্ভুক্তি তাদের জন্য বিপদ বয়ে আনতে পারে। ফলে ছাত্রশিবির নিয়ে বিতর্ক বাড়বে।

জানা গেছে, ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যেই অনেক প্রশ্ন-বিভ্রান্তি রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে তাদের মূল রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ছন্নছাড়া অবস্থায় রয়েছে। যে কারণে ছাত্রলীগের এসব নেতাকর্মী শিবির বেশে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে।

ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে ইসলামী ছাত্রশিবিরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে  আলোচনা চলছে। গুঞ্জন উঠেছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে সারা দেশের কমিটিগুলোর মধ্যে শিবিরের অনেক নেতাকর্মীর অস্তিত্ব রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে গত রোববার প্রকাশ্যে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদের পরিচয়। ফরহাদ হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের এবং কবি জসীমউদদীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। ফরহাদ ২০২২-২৩ সেশনে জসীমউদদীন হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া এস এম ফরহাদ পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিষদের সাবেক সভাপতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরহাদ ছাত্রলীগের কমিটিতে পদধারী নেতা ছিলেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে ঘোষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পান তিনি। এছাড়া ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের সঙ্গে ফরহাদের একাধিক ছবি দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এ নিয়ে ফেসবুকে পক্ষে-বিপক্ষে নানা বিতর্ক দেখা গেছে।

তবে ছাত্রলীগে নিজের পদ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঢাবি শিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ। গতকাল সোমবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কবি জসীমউদদীন হল এবং সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিটিউট ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচি ও কার্যক্রমের সঙ্গে আমার (এস এম ফরহাদ) কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ছাত্রলীগের কোনো পদ-পদবির জন্য কোনো সিভি আমি কখনো কাউকে দিইনি। কখনো আমি নিজেকে ছাত্রলীগ হিসেবে কোনো মাধ্যমে পরিচয়ও দিইনি।

তিনি আরও বলেন, হল বা ডিপার্টমেন্টের কমিটিতে কাকে রাখা হবে সেটা সংশ্লিষ্ট ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত। সেখানে আমাকে কেন জড়ানো হচ্ছে? যেখানে আমি তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই। বরং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে অতীতের সব আন্দোলন-সংগ্রামে আমি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। আমাকে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়ানোর বিষয়টিকে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের স্পিরিট নষ্ট করার একটি অপচেষ্টা বলে আমি মনে করি।

এর আগে, গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে সাদিক কায়েম নিজেকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান সভাপতি হিসেবে দাবি করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।

জানা যায়, সাদিক কায়েম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সম্মুখ সারিতে ছিলেন। ফেসবুক পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি সংস্কারে সব ছাত্র নেতৃবৃন্দকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি ঢাবি ক্যাম্পাসে ঢাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি চর্চার কথা বলেন।

এই ঘটনার পরে সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। কেউ কেউ বলতে থাকেন ‘তিনি সমন্বয়কদের সমন্বয়ক’, আবার কেউ বা মজা করে বলতে থাকেন, ‘মানুষ মাত্রই শিবির’। আবার কেউ বিদ্রূপ করে বলেন, ‘নিজেদের সুবিধা নিতেই এই সময় তিনি নিজেকে প্রকাশ করেছেন’।

এর আগেই দেখা গেছে, আদর্শের দিক থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করলেও শিবির ও ছাত্রদলের সাবেক নেতাকর্মীরা পক্ষ বদলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ দিয়েছেন। শুধু ছাত্রলীগ নয়, মূল দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদেও জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় যোগ দিয়েছিলেন বলে সারা দেশ থেকে খবর পাওয়া যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ থেকে জামায়াত। আবার কেউ ছাত্রলীগ থেকে শিবিরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। যার কারণে উভয় দলের নেতাকর্মীদের ভবিষ্যতে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে।
শিবির কিংবা ছাত্রলীগ হয়ে যাওয়া নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হলেও বিষয়টি এখন আর কানাঘুষা কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ঘটনার সত্যতাও মিলছে সরকারের পদত্যাগের আন্দোলনের পর।

এদিকে সরকার পতনের পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধেও দলবদলের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ইস্যুতে ছাত্রলীগের সঙ্গে শিবিরের সংঘর্ষের সময়ও আব্দুর রহমান শক্ত ভূমিকা পালন করেন। সেই রহমান এখন নিজেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের নেতা হিসেবে দাবি করছেন।

রহমানের মতো অসংখ্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এখন দল পরিবর্তন করে শিবিরের পদধারী নেতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। শুধু শিবিরে নয়, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রবেশ করছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক উপউপাচার্য রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছাত্রশিবিরের লোকজন আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগে প্রবেশ করেছে। ঠিক একইভাবে এখন শোনা যাচ্ছে শিবিরের কমিটিতে ছাত্রলীগ প্রবেশ করছে বা করতে পারে। এর কারণ হলো ব্যালেন্স রাজনীতি এদেশে আছে এবং থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ শিবিরের কমিটিতে বা ছাত্রদলের কমিটিতে প্রবেশ করে এখন কিছু করবে না। ধীরে ধীরে এরা বলয় বাড়াবে এবং ভিতরে ভিতরে ক্ষতি করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সুবিধাবাদীরা সব সময় সুযোগ নেয়। শিবির, ছাত্রলীগে প্রবেশ করেছে এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে হলে বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিয়ে প্রতিটি দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে হবে। 

আরবি/জেআই

Link copied!