বিএনপি নিয়ে কথা বলার আগে হিসাব-নিকাশ করা উচিত

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪, ০৭:৫৬ পিএম

বিএনপি নিয়ে কথা বলার আগে হিসাব-নিকাশ করা উচিত

ছবি, রূপালী বাংলাদেশ

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে বিএনপির নেতারা বলেছেন, ‍‍`‍‍`পদগুনে বুদ্ধিমান, পতাকা বলে শক্তিমান‍‍`‍‍`।  ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, পদগুণে হলো বুদ্ধিমান, পতাকাগুনে শক্তিমান কিন্তু যখন পতাকা থাকে না, তখন শক্তিও থাকে না। বিএনপি সম্পর্কে যে যাই বলেন, পদগুনে বলেন না। পরামর্শ শুনতে চাই।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানী ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিএনপির নেতারা বক্তব্য রাখেন। মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় আয়োজন করে বিএনপি। সভাপতির বক্তব্যে প্রথমেই ‍‍`ভার্চুয়ালি নয়, সকলের প্রত্যাশা অতিদ্রুত সশরীরে উপস্থিত হয়ে আমাদের মাঝে বক্তব্য দিবেন তারেক রহমান‍‍` এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল।

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই আওয়ামী লীগ, সেই আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর আমাদের স্বপ্ন গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।  রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় তরুণদেরকে হত্যা করেছে।  এটা বারবার মনে করতে হবে। তিনি বলেন, অনেকে সংস্কারের কথা বলেন , প্রথম সংস্কার তো শুরু করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান । তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে এই সংস্কার শুরু করেছিলেন। প্রতিটি সেক্টরে তিনি সংস্কার করেছেন। এদেশের সংস্কার বা পরিবর্তন সব কিছু শুরু হয়েছিল বিএনপির হাত ধরেই।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে বলেন, এখন তারাই আমাদেরকে সংস্কারের কথা শোনান । যারা ‍‍`পদগুনে বুদ্ধিমান, পতাকা বলে শক্তিমান‍‍`। আমাদের ৩১ দফার পর আর কোনো সংস্কার থাকে না । অতিদ্রুত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংস্কারের পথ সুগম করার আহ্বান জানান তিনি।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজ দেশের মানুষের একটাই প্রশ্ন, আমরা কেনো আমাদের অধিকার আজকেও ফিরে পেলাম না? মানুষ প্রত্যাশা করেছিলো,যে জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে, সে লক্ষে সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাবে, কিন্তু সেটা তারা পায়নি। স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তারা অনুতপ্ত না, বরং নানা ধরনের উস্কানী দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা করছে।  তবে দেশের মানুষ কখনোই নিশ্চুপ বসে থাকেনি। এর প্রতিকার করেছে। ভবিষ্যতেও করবে। সুযোগ পেলে তারা ভোটেট মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করে, সুযোগ না পেলে গণঅভ্যুত্থান ঘটায়। তাই সাবধান করে দিতে চাই , যারা বতমানে দেশ চালাচ্ছেন, তারা দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুক।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড আব্দুল মঈন খান বলেন, বিজয়ের কথা বলতে পারতাম না যদি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা না করতেন। নতুন প্রজন্ম অবশ্যই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে তবে বলতে চাই নতুন যে পরিবর্তনের ফসল ঘরে তুলতে হবে॥ ভাবার কারন নাই সবাই অন্তবর্তী সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। যতদিন ভোটের অধিকার অর্জিত না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। রাজপথ ছেড়ে যাবো না।

বিএনপি‍‍`র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছি এতবার কিভাবে বহন করব এত প্রাণ দেয়া স্বপ্ন দেখা তার কি কোন বাস্তবায়ন হয়েছে? আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপি‍‍`র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি দিয়ে রহমানকে হত্যা  ও বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়া হয়েছিল। ২৪ সালে এবার আকাঙ্ক্ষা আরো বেশি জনগণের স্বপ্ন বেশি এত প্রাণ ও হতাহত  বাংলাদেশের কোন সময় হয়নি। নির্বাচন করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে চাই ষড়যন্ত্র করে নয় তাই বলেছে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসায় অজুরের মধ্য দিয়ে জনগণের ভালোবাসা ভোট এর মাধ্যমে ক্ষমতায় যাবে বিএনপি।

সবাইকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন বর্তমান সরকার তো জোর করে দায়িত্ব নেয় নাই। জনগণ ও আমরা জোর করে দায়িত্ব দিয়েছি। সেই সাথে সরকারের উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি নিয়ে কথা বলার আগে হিসাব-নিকাশ করে বলতে হবে যা মন্তব্য করবেন এ পথ গুনে করবেন না। জিয়াউর রহমান বলতেন মন্ত্রীর চেয়ে রাজনৈতিক নেতা বড়। পদগুলো হলো বুদ্ধিমান পতাকাগুনে শক্তিমান কিন্তু যখন পতাকা থাকে না তখন শক্তিও থাকে না। বিএনপি সম্পর্কে যে যাই বলেন পদগুনে করেন না॥ পরামর্শ শুনতে চাই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, অরক্ষিত স্বাধীনতা পরাধীনতার চেয়েও ভয়ংকর। আমরা কি স্বাধীনতা অর্জন করেছি কারো করদ রাজ্যে হয়ে থাকার জন্যা নয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, এখন কঠিন সময় যাচ্ছে । দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডাক্তার এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, রাজনীতি ছিল বা আছে বলেই ৪৭, ৫২, ৭১ , ৯০ ও ২৪  হয়েছে। বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করে কোন লাভ হবে না।  জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরে দিন। কোনভাবেই জনগণের সাথে রাজনীতি করার চিন্তা করবেন না। নির্বাচন নিয়ে যত কালক্ষেপন করবেন,  ততই পতিত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাবে। ইতিহাস ভুলে যাবেন না।

আলোচনা সভায় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা তাদের কার্যক্রমের উপর নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশবাসীকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, সরকারকে সফল দেখতে চায় তার দল। তবে এটা নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমের উপর। এসময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনার কথা জনগণের জানার অধিকার রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

স্বৈরচায় বিদায় নেওয়ায় দেশের মানুষ স্বাধীনতার সুফল পাবে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। 

আরবি/এস

Link copied!