গাজার শিল্প-সংস্কৃতিক, খেলোয়া ও সংবাদিকদের এক অভিন্ন মিলনস্থল বা প্রাণকেন্দ্র, ছিল ‘আল-বাকা ক্যাফে’। সেই শান্ত নিরীহ জায়গাটিই এবার পরিণতি হয়েছে মৃত্যুকূপে।
সোমবার (৩০ জুন) গাজা শহরের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত এই ক্যাফেতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন ৩০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এছাড়াও এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ।
চিকিৎসা সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তাঁবু ও প্লাস্টিকের চাদরে তৈরি আল-বাকা ক্যাফে ছিল সাংবাদিক, ক্রীড়াবিদ, শিল্পী এবং সাধারণ মানুষের প্রিয় এক আশ্রয়স্থল- সমুদ্রের ধারে এই স্থানে তারা শান্তি খুঁজতেন আসতেন।
সূত্র বলছে, ইসরায়েলি হামলায় ক্যাফেটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, এতে ওই স্থানের বালিতে তৈরি হয়েছে বিশাল গর্ত। বেসামরিক প্রতিরক্ষা দল কমপক্ষে ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে, এছাড়াও সেখানে এখনো ধ্বংসস্তূপে তল্লাশি চলছে।
এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন গাজার সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও পেশাগত জীবনের একাধিক উজ্জ্বল নাম। তারা ছিলেন প্রতীক- প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও প্রেরণার।
ইসমাইল আবু হাতাব– ফটোসাংবাদিক
এদিন ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন ফিলিস্তিনি ফটোসাংবাদিক ইসমাইল আবু হাতাব। এই সাংবাদিক গাজার বেসামরিক জীবনের উপর যুদ্ধের প্রভাব বছরের পর বছর নথিভুক্ত করেছেন। তার ছবি শুধু ধ্বংস নয়, তুলে ধরেছে মানবতা, সাহস ও সম্প্রদায়ের দৃঢ়তা।
তার সহকর্মীদের মতে, তিনি ছিলেন যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম নির্ভরযোগ্য ডকুমেন্টার, তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সত্য তুলে ধরতেন। তার মৃত্যু ফিলিস্তিনের জন্য বড় অপূরণীয় এক স্থান। কেননা তার সাংবাদিকতা ছিল ফিলিস্তিনের জন্য মানবিক দলিল।
মালাক মুসলেহ– নারী বক্সার
মাত্র ২১ বছর বয়সেই মালাক মুসলেহ হয়ে উঠেছিলেন প্রতিরোধ ও সাহসের প্রতীক। গাজার প্যালেস্টাইন বক্সিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেওয়া মালাক কেবল প্রতিযোগীই ছিলেন না, ছিলেন মেয়েদের অনুপ্রেরণার নাম।
এই বক্সার বিশ্বাস করতেন, খেলাধুলার মাধ্যমেও আশার আলো জ্বালানো যায়। সম্প্রতি তিনি তার দেশের কিশোর ক্রীড়াবিদদের পরামর্শ দিচ্ছিলেন। আর এরই মধ্যে তার মৃত্যুর খবর শোনা যায়, তার মৃত্যুতে ফিলিস্তিনি ক্রীড়াঙ্গনে এক হৃদয়বিদারক শূন্যতা তৈরি করেছে।
ফ্রান্স আল-সালমি– নীরবতার শিল্পী
চলমান যুদ্ধের ভেতর থেকেও ফ্রান্স আল-সালমি তার শিল্পকর্মে খুঁজে পেয়েছিলেন বাঁচার ভাষা। তিনি কাঠকয়লা ও উদ্ধারকৃত উপকরণ দিয়ে তৈরি করতেন এমন শিল্প যা বলত মৃত্যু, যন্ত্রণার মধ্যেও টিকে থাকার গল্প। বোমা হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে তার আঁকা একটি চিত্রকর্মে দেখা যায়, সাদা কাফনে মোড়ানো রক্তাক্ত এক নারীর দেহ। দুর্ভাগ্যবশত, হামলার পর আল-সালমির মৃতদেহও প্রায় ঠিক সেই ভঙ্গিতে পাওয়া যায়।
আল-সালমি শিশুদের জন্য কর্মশালা করতেন, শিল্পে আশ্রয় খুঁজতেন। তার মৃত্যুতে ফিলিস্তিনের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বড় ধরনের শূন্যতা নেমে এসছে বলে দারণা করছে দেশটির শিল্প সমাজ।
মুস্তফা আবু আমিরা – ফুটবলার
নিহতদের মধ্যে ছিলেন ফুটবলার মুস্তফা আবু আমিরা, আল-হিলাল গাজা ক্লাবের প্রতিশ্রুতিশীল ফরোয়ার্ড। তিনি শুধু মাঠেই নন, মাঠের বাইরেও ছিলেন শিশু-কিশোরদের প্রেরণাদাতা। শরণার্থী শিবিরে শিশুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, যুব কর্মসূচিতে স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে তিনি গড়তে চেয়েছিলেন একটি আশাবাদী ভবিষ্যৎ।
আপনার মতামত লিখুন :