ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার চেয়েও অনেক বেশি বিধ্বংসী বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ।
তিনি জানান, গাজায় ইসরায়েল প্রায় ৮৫ হাজার টন বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে, যা হিরোশিমায় ব্যবহৃত বোমার ধ্বংসক্ষমতার ছয় গুণ। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
আলজাজিরা প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে আলবানিজ বলেন, ‘গাজাকে নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করেছে একাধিক অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যারা এই যুদ্ধকে মুনাফার উৎসে পরিণত করেছে।’
তিনি গাজায় পরিচালিত তথাকথিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’-কে ‘একটি পরিকল্পিত মৃত্যুফাঁদ” হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, “এটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে অনাহারে থাকা মানুষদের গুলি করে হত্যা করা যায় বা তাদের গাজা ত্যাগে বাধ্য করা যায়।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ২০ মাসে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ১১৮ জন, যাদের মধ্যে ১২ জন ছিলেন ত্রাণপ্রার্থী।
আলবানিজ বলেন, ‘ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনের মধ্যে তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২১৩ শতাংশ লাভ হয়েছে। এটা সেই বাস্তবতা যেখানে একজন ধ্বংস হয়েছে, আরেকজন লাভবান হয়েছে।’
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, ‘গাজা এখন ইসরায়েলি সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছে। এখানে নতুন অস্ত্র, ড্রোন, নজরদারি ও রাডার প্রযুক্তির পরীক্ষা চলছে।’
আলবানিজ জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ স্থগিত রাখতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধে সহযোগিতার অভিযোগে বেসরকারি করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই গণহত্যা প্রকাশ্য এবং সরাসরি সম্প্রচারিত। এটিকে আর নিরপেক্ষতা বা অজ্ঞতার মাধ্যমে ব্যাখ্যার সুযোগ নেই।’
বক্তব্যের শেষভাগে তিনি বলেন, ‘মানবতার এখন চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে। আমরা যদি নীরব থাকি, ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।’
আপনার মতামত লিখুন :