ঢাকা বুধবার, ০৭ মে, ২০২৫

বিয়েতে যে খুতবা পড়া হয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৬, ২০২৫, ০৮:২১ পিএম
প্রতীকী ছবি

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম সুন্নাত বিয়ে। তিনি বিয়েকে সুন্নাত ঘোষণা দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, রাসুল. (সা.) বলেন, 'বিয়ে আমার সুন্নত। অতএব যে আমার সুন্নত পালন থেকে বিরত থাকবে, সে আমার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (ইবনে মাজাহ)

বিয়ের খুতবা কখন, কীভাবে পড়তে হয়?

বিবাহ সুন্নতসম্মত পদ্ধতিতে হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিবাহ সুন্নাহসম্মত না হলে এর সওয়াব ও বরকত থেকে বঞ্চিত হয় বর-কনে এবং সংশ্লিষ্ট সবাই। বিয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ বিয়ের খুতবা।

সাক্ষীর উপস্থিতিতে ইজাব-কবুলের আগে বিয়ের খুতবা পড়া সুন্নত। তবে খুতবা পড়া ফরজ কিছু নয়। এজন্য শরিয়ত নির্ধারিত সাক্ষীর উপস্থিতিতে যদি বিশুদ্ধভাবে বিয়ের ইজাব-কবুল হয়ে যায় এবং উপস্থিত সাক্ষীরা ইজাব-কবুলের শব্দগুলো শুনে তাহলে বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে।

ইজাব-কবুলের আগে খুতবার শব্দগুলো পড়া না হলেও এতে বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ, ৬১২২৫৩ ফতোয়া, ১২৬২-৯৫৩)

এই খুতবা দাঁড়িয়ে দেওয়া সুন্নত। তবে বসে দিলেও কোনো গুনাহ নেই। তাতে বিবাহের কোনো ক্ষতি হবে না। (জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতওয়া বিশ্বকোষ) তবে অবশ্যই খুতবা আরবিতে দিতে হয়।

বিয়ের আরবি খুতবা, উচ্চারণ ও অর্থসহ তুলে ধরা হলো-

إن الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونؤمن به ونتوكل عليه، ونعوذ بالله من شرور انفسنا ومن سيئات اعمالنا، من يهده الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له، واشهد ان لا اله الا الله وحده لا شريك له، واشهد ان سيدنا ومولانا محمد عبده و رسوله. اما بعد!

فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم، بسم الله الرحمن الرحيم، يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ (سورة آل عمران : 102)  

وقال تعالى: يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ، واحِدَةٍ، وخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا ونِسَاءً واتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ والْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا (سورة النساء:1)

وقال تعالى: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا، يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا (سورة الأحزاب: 70-71)

وقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا تزوج العبد فقد استكمل نصف الدين فليتق الله في النصف الباقي ( مشكاة المصابيح: 3096)

وقال عليه الصلاة والسلام: تَزَوَّجُوا الوَدُودَ الوَلودَ ، فإني مُكَاثِرٌ بكم الأمم  (أبي داود: 2046)

বাংলা উচ্চারণ: ইন্নাল হামদা লিল্লাহি, নাহমাদুহু ওয়া নাস্তাইনুহু, ওয়া নাস্তাগফিরুহু, ওয়া নাউজুবিল্লাহি মিন শুরুরি আনফুসিনা, ওয়ামিন সাইয়ি য়াতি আমালিনা, মাই ইয়াহদি হিল্লাহু ফালা মুদিল্লালাহ, ওয়া মাই ইউদলিল ফালা হাদিয়া লাহ।

ওয়া আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহ, আম্মা বাদ! ফা আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানুত-তাকুল্লাহা হাক্কা তুকাতিহি, ওয়ালা তামুতুন্না ইল্লা ওয়া আনতুম মুসলিমুন।

ওয়া কালা তায়ালা, ইয়া আইয়ুহান্না সুত্তাকু রাব্বাকুম আল্লাজি খালাকাকুম মিন নাফসিও ওয়াহিদাতিও, ওয়া খালাকা মিনহা জাওজাহা, ওয়া বাসসা মিনহুমা রিজালান কাসিরাও ওয়া নিসা আ, ওয়াত তাকুল্লা হাল্লাজি তাসা আলুনা বিহি, ওয়াল আরহাম, ইন্নাল্লাহা কানা আলাইকুম রাকিবা।

ওয়া কালা তায়ালা, ইয়া আইয়ুহাল্লা জিনা আমানু ইত্তাকুল্লাহা, ওয়া কুলু কাওলান সাদিদা। ইউসলিহ লাকুম আমালাকুম ওয়া ইয়াগ ফিরলাকুম জুনুবাকুম, ওয়ামাই ইয়ুতিয়িল্লাহা ওয়া রাসুলাহু ফাকাদ ফাজা ফাওজান আজিমা।’

ওয়া কালা আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম, ইজা তাজাওয়াজাল আবদু, ফাকাদ ইসতাকমালা নিসফাদ দীন‚ ফাল ইয়াত্তা কিল্লাহা ফিন নিসফিল বাকি।’

ওয়া কালা আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম, আন্নিকাহু মিন সুন্নাতি, ফামান রাগিবা আন সুন্নাতি ফালাইসা মিন্নি। ওয়া কালা আইজান, তাজাও ওয়াজু আল ওয়াদুদাল ওয়ালুদ, ফা ইন্নি মুকাসিরুম বিকুমুল উমামা ইয়াউমাল কিয়ামাহ।’

বাংলা অর্থ: নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তাঁর প্রশংসা করি। তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাই। আমরা নফসের অকল্যাণ থেকে এবং আমাদের খারাপ কর্মগুলো থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন কেউ তাকে বিভ্রান্ত করতে পারে না, আর আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তাকে কেউ হেদায়েত দিতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাসক নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসুল।

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে সত্যিকারের ভয় করো এবং মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। হে মানবজাতি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদের এক সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তার যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। ভয় করো যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট জিজ্ঞাসা করো এবং (সতর্ক থাকো) রক্ত, আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখেন। (সুরা নিসা, আয়াত: ১)

হে মুমিনগণ, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য কথা বলো। তিনি তোমাদের কর্মের ভুলত্রুটি সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, তারাই অর্জন করবে প্রকৃত সফলতা। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৭০-৭১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বান্দা বিবাহ করার মাধ্যমে তার অর্ধেক দীন পূর্ণ করে। অতএব অবশিষ্ট অর্ধেকের জন্য (দীনের ব্যাপারে) আল্লাহকে ভয় করা উচিত। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস: ৩০৯৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, তোমরা এমন স্ত্রীলোকদের বিবাহ করবে, যারা স্বামীদের অধিক ভালোবাসে এবং যারা অধিক সন্তান প্রসবিনী। কেননা, আমি (কিয়ামতের দিন) তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে (পূর্ববর্তী উম্মতের ওপর) গর্ব করব। (আবু দাউদ, হাদিস: ২০৪৬)

এ খুতবা ছাড়াও অন্য খুতবা দেওয়া যাবে। যে খুতবায় থাকবে আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রশংসা। বিয়ে সম্পর্কিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস।