ঢাকা রবিবার, ০৮ জুন, ২০২৫

৫০০ বছরের পুরোনো পথ ধরে হজযাত্রা তিন স্প্যানিশ মুসলিমের

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম
যাত্রাপথে সিরিয়ার দামেস্কে সুউক আল-হামিদিয়াহ বাজারে স্পেনের তিন হজযাত্রী। ছবি-সংগৃহীত

ঘোড়ায় চড়ে হাজার কিলোমিটার পেরিয়ে হজে গেছেন তিন স্পেনীয় মুসলিম। আন্দালুসিয়া থেকে শুরু করে সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা পর্যন্ত ৮ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়েছেন তাঁরা, যেখানে শেষবার এমন সফর হয়েছিল ১৪৯১ সালে।

সঙ্গে ছিল না বিলাসবহুল যন্ত্রচালিত যানবাহন, বরং হাতে ছিল ঘোড়ার লাগাম, পিঠে ব্যাগ আর মনে ছিল হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের হাতছানি।

স্পেনের দক্ষিণাঞ্চল আন্দালুসিয়া থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবরে যাত্রা শুরু করেন তিন মুসলিম—আবদেলকাদের হারকাসি আইদি, তারেক রদ্রিগেজ এবং আব্দাল্লাহ রাফায়েল হার্নান্দেজ মানচা।

তাদের লক্ষ্য ছিল ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ পালন। কিন্তু তারা সেটি করতে চেয়েছিলেন ঐতিহাসিক এক উপায়ে—যেভাবে একসময় মুসলিমরা মধ্যযুগে হজে যেতেন।

দীর্ঘ সাত মাসের সফর, ৮০০০ কিলোমিটার পথ
এই তিন সাহসী যাত্রী পেরিয়ে গেছেন ইউরোপ ও এশিয়ার নানা দেশ—ফ্রান্স, ইতালি, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, সিরিয়া, জর্ডান এবং সবশেষে সৌদি আরব। মে মাসে তাঁরা মক্কায় পৌঁছান।

পুরো যাত্রা ছিল প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ, যা পাড়ি দিতে সময় লেগেছে প্রায় সাত মাস। এই দূরত্ব ও ধৈর্যের পরীক্ষার ফলে তারা অনুভব করেছেন—এটা শুধু শরীরের নয়, আত্মারও এক বিশাল অভিযাত্রা।

সিরিয়ার আলেপ্পো সিটাডেল ও দামেস্কের উমাইয়া মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের মনে হয়েছিল, সময় যেন তাদের নিয়ে গেছে শত শত বছর পেছনে।

তারা আবিষ্কার করেন অটোমান আমলের পুরনো রেললাইন, যা একসময় ইস্তাম্বুলকে সৌদি আরবের হিজাজ অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করত। সেই রেললাইন ধরে দিনের পর দিন তাঁরা এগিয়ে গেছেন মরুভূমির পথে।

মক্কায় পৌঁছে কাবার সামনে দাঁড়িয়ে আবেগে আপ্লুত হন তাঁরা। হারকাসি বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। কাবার সামনে দাঁড়িয়ে যখন তা ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পেলাম, তখন হাজারো কিলোমিটারের দীর্ঘ পথের শ্রান্তি চোখের পলকেই মুছে গেল।’

সব পথ যে রোমাঞ্চে ভরা ছিল তা নয়। বসনিয়ায় হঠাৎ হারিয়ে যায় তাদের ঘোড়াগুলো। পরে জানা যায়, তারা ভুলবশত ঢুকে পড়েছে একটি ল্যান্ডমাইন-বহুল এলাকায়।

কেউ সাহস করে সেখানে ঢুকতে পারেননি। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে ঘোড়াগুলো নিজেরাই ফিরে আসে একেবারে অক্ষত অবস্থায়।

মানবিকতা ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের নিদর্শন এই যাত্রার সবচেয়ে মূল্যবান অভিজ্ঞতা ছিল—মানুষের সহানুভূতি। হারকাসি বলেন, ‘যখন আমাদের কিছুই ছিল না, অচেনা মানুষ খাবার দিয়েছেন, ঘোড়ার যত্ন নিয়েছেন, টাকা দিয়েছেন। এমনকি আমাদের গাড়ি নষ্ট হলে তারা সাহায্য করেছেন। এতে আমরা বুঝেছি, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য কত বড় সত্য।’

ইতিহাস পুনর্জাগরণ, আধ্যাত্মিকতা ও ঐক্যের অনন্য বার্তা এই তিন সাহসীর সফর যেন শুধু একটি হজযাত্রা নয়, বরং এক ধৈর্য, ঐতিহ্য ও ইমানের প্রতীক। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে দাঁড়িয়ে তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন—ইচ্ছাশক্তি ও বিশ্বাস থাকলে ইতিহাসের ধুলোয় হারিয়ে যাওয়া পথও আবার জেগে ওঠে। সূত্র :এপি