ইসলামে গোসল একটি গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক ও আধ্যাত্মিক পবিত্রতা অর্জনের উপায়। সাধারণভাবে গোসল করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলেও, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে গোসল ফরজ হয়ে যায় এবং তখন তা নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী করাই বাধ্যতামূলক।
প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নারী-পুরুষের জন্য কখন ফরজ গোসল করতে হয়?
- যৌন সম্পর্কের পর
- বীর্যপাতের পর
- হায়েজ (মাসিক) বা নেফাস (সন্তান জন্মের পর রক্তস্রাব) শেষ হলে
- সন্তান প্রসবের পর
- কারও মৃত্যুর পর (জানাজার পূর্বে গোসল করানো)
কখন গোসল মুস্তাহাব?
ইসলামে কিছু পরিস্থিতিতে গোসল করাকে মুস্তাহাব (অর্থাৎ করা উত্তম) বলা হয়েছে, যেমন-
- জুমার নামাজের পূর্বে
- ঈদের নামাজের আগে
- ইহরাম বাঁধার আগে (হজ বা ওমরাহর সময়)
- অজ্ঞানতা কাটার পর
- কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে
কোন পানি দিয়ে গোসল জায়েজ?
গোসলের জন্য পবিত্র ও পরিষ্কার পানিই ব্যবহারযোগ্য। যেমন:
- বৃষ্টির পানি
- নদী, সাগর বা ঝর্ণার পানি
- বড় পুকুর বা ট্যাঙ্কির পানি
- বরফ গলে পাওয়া পানি
- কুয়োর পানি
কিন্তু নিচের ধরনের পানি দিয়ে গোসল জায়েজ নয়:
- যেসব পানিতে নাপাক বা অপবিত্র কিছু মিশে গেছে (যেমন: মল, রক্ত, মদ, মূত্র ইত্যাদি)
- ফল বা গাছ থেকে নিঃসৃত পানি
- যেসব পানির রঙ, গন্ধ, স্বাদ পরিবর্তিত হয়েছে
- হারাম বা হিংস্র প্রাণীর পান করা অবশিষ্ট পানি
ফরজ গোসলের মূল তিনটি কাজ
- কুলি করা (গড়গড়া করা)
- নাকে পানি পৌঁছানো
- সম্পূর্ণ শরীরে পানি পৌঁছানো অর্থাৎ এক পশম পরিমাণ অংশও শুকনো থাকা যাবে না
ফরজ গোসলের ধাপে ধাপে নিয়ম
- নিয়ত করা (উদ্দেশ্য নির্ধারণ): যেমন, ‘আমি নাপাকি থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করছি’
- বিসমিল্লাহ পড়ে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া
- শরীরের নাপাক অংশ পরিষ্কার করা
- অজু করা (রোজাদার না হলে কুলি ও নাকে পানি দেওয়া)
- মাথায় পানি ঢেলে চুলের গোড়া পর্যন্ত ভিজানো
- প্রথমে ডান কাঁধে, পরে বাম কাঁধে পানি ঢেলে পুরো শরীর ধোয়া
- শেষে পা ধোয়া এবং শুকনো কাপড় পরা
শেষ কথা
গোসল শুধু পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, বরং একজন মুসলমানের আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতার চর্চাও বটে। শরীর ও আত্মার পবিত্রতা ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য। তাই শুদ্ধভাবে গোসল করে নামাজ, হজ, রোজা ইত্যাদি ইবাদত যথাযথভাবে আদায় করাই একমাত্র কাম্য।
আপনার মতামত লিখুন :