শনিবার, ০৫ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিবিসি

প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৫, ০৯:৫০ পিএম

হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী হয়েও মহররম পালন করেন যে ব্রাহ্মণরা

বিবিসি

প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৫, ০৯:৫০ পিএম

লখনৌতে মহররমের তাজিয়া নিয়ে একটি হিন্দু মেয়ে।

লখনৌতে মহররমের তাজিয়া নিয়ে একটি হিন্দু মেয়ে।

কারবালার যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে যে এক গভীর বেদনাবিধুর ও তাৎপর্যময় অধ্যায়, সে কথা সর্বজনবিদিত। সেই ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে (হিজরি ৬১) ইমাম হোসাইন শহীদ হয়েছিলেন স্বৈরাচারী ইয়াজিদের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের সংগ্রামে।

এই ঐতিহাসিক যুদ্ধ ঘিরে ভারতের সমাজে গড়ে উঠেছে এক অনন্য ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধ—‘হুসাইনি ব্রাহ্মণ’ নামক এক ব্যতিক্রমী হিন্দু সম্প্রদায়ের মাধ্যমে।

জনশ্রুতি অনুযায়ী, পাঞ্জাবের একজন মোহিয়াল ব্রাহ্মণ যোদ্ধা রিহাব সিধ দত তার সাত পুত্রসহ ইমাম হোসাইনের পক্ষ নিয়ে কারবালার যুদ্ধে অংশ নেন এবং শহীদ হন। যদিও এ তথ্য ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত নয়, তথাপি ভারত ও পাকিস্তানের বহু হুসাইনি ব্রাহ্মণ নিজেদের রিহাব দতের বংশধর বলে দাবি করে থাকেন।

ভারতের লখনৌতে ইমামবড়ার সামনে মহররমের 'জলুস'। (২০২২)

হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী হয়েও এই সম্প্রদায়ের সদস্যরা প্রতি বছর মহররম মাসে আশুরা পালন করেন, ইমাম হোসাইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাজিয়া মিছিলে অংশ নেন, কিছু ক্ষেত্রে রোজাও রাখেন। তারা শিয়া মুসলিমদের মজলিসে উপস্থিত হন, আবার হিন্দু রীতিতে নবরাত্রি ও দীপাবলিও উদযাপন করেন। এই সহাবস্থান ও সম্প্রীতির নামেই তারা পরিচিত—হুসাইনি ব্রাহ্মণ নামে। কোথাও কোথাও তাদের মোহিয়াল ব্রাহ্মণ বলেও ডাকা হয়।

মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধু, প্রেমচাঁদের কারবালা নাটক এবং পাকিস্তানের শিয়া চিন্তাবিদ হাসান জাফর নকভি কিংবা ভারতীয় ইসলামি পণ্ডিত গুলাম রসুল দেহলভির ব্যাখ্যাগুলো এই জনশ্রুতিকে বহন করে চলেছে। 

শিল্পীর কল্পনায় কারবালার যুদ্ধ (৬৮০ খ্রীষ্টাব্দ)

দেহলভির ভাষ্য অনুযায়ী, ইমাম হোসাইনের “হাল মিন নাসিরিন ইয়ানসুরনা” (আমাকে সাহায্য করবে এমন কেউ কি নেই?) আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমুদ্রগুপ্ত নামক এক ভারতীয় রাজা রিহাব দতের নেতৃত্বে সৈন্য পাঠান। যদিও পৌঁছার আগেই ইমাম শহীদ হন, রিহাব দত ও তার বাহিনী মুখতার আল-সাকাফির সেনাদলে যোগ দিয়ে ইয়াজিদ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন।

লখনৌ, দিল্লি, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, কাশ্মীরসহ ভারতের নানা প্রান্তে এখনো কয়েক হাজার হুসাইনি ব্রাহ্মণ পরিবার ছড়িয়ে আছেন। এমনকি আরব উপদ্বীপেও তাদের উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন গবেষকরা।

লখনৌতে হুসাইনি ব্রাহ্মণরা তাদের মন্দিরে মহররমের তাজিয়ায় শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন (২০২২)

প্রয়াত অভিনেতা সুনীল দত ও তাঁর স্ত্রী নার্গিস ছিলেন হুসাইনি ব্রাহ্মণ বংশের প্রতিনিধি। তাদের সন্তান সঞ্জয় দত ও প্রিয়া দত এই ঐতিহ্যের উত্তরসূরি। বরখা দত্ত, সুনীতা ঝিংরান, সাবির দতসহ অনেক পরিচিত মুখ এই সম্প্রদায়ের অংশ।

ভিন্নধর্মে শ্রদ্ধাবোধের অনন্য নজির

এই সম্প্রদায়ের প্রবীণ সদস্যদের মধ্যে যেমন কে কে বালি, বিপিন মোহন বা ধ্রুপদী সংগীতশিল্পী সুনীতা ঝিংরান, তেমনি নবীন প্রজন্মের রাধিকা বুধওয়ার বা ঐশ্বর্য ঝিংরানের কণ্ঠেও শোনা যায় এক অভিন্ন সুর—"আমরা হিন্দু ব্রাহ্মণ, কিন্তু ইমাম হোসাইনের ভক্ত"। কেউ কেউ বলেন, খাঁটি হুসাইনি ব্রাহ্মণদের গলার কাছে একটি জন্মদাগ থাকে—যেটি তলোয়ারের দাগের স্মৃতি বহন করে বলে বিশ্বাস।

উত্তরপ্রদেশে মহররমের তাজিয়ায় এক হিন্দু নারীর শ্রদ্ধা নিবেদন।

যদিও আজকের প্রজন্মে এই দ্বৈত ধর্মীয় চর্চার প্রথা ধীরে ধীরে কমে আসছে, তবু অনেকেই মহররম উপলক্ষে শোকমিছিল, মজলিস বা রোজা পালন করেন—হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে ইমাম হোসাইনের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে। ধর্মের গণ্ডি ছাড়িয়ে মানবতার যে আহ্বান তিনি জানিয়েছিলেন, হুসাইনি ব্রাহ্মণদের ঐতিহ্য তারই এক প্রাণবন্ত উত্তর।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!