পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেড। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ডাটা সেন্টার বিক্রির ঘোষণা দেয় পরিচালনা পর্ষদ। ঘোষণার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২০২২ সালের ৫ জুন প্রতি শেয়ারে দর বেড়ে হয়েছিল ৮২ টাকা। বিনিয়োগকারীর বিপুল লোকসানের তিন বছর পর সেই দর বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
দর বাড়ার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে সম্প্রতি কমিটি করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিটিকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া ও সহকারী পরিচালক মো. মোসাব্বির আল আশিক।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে গতকাল শুক্রবার দেখা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ডাটা সেন্টার বিক্রির ঘোষণার সময়ে প্রতি শেয়ারে দর ছিল ৩৬ টাকা। ঘোষণার এক মাসের ব্যবধানে ৩০ জানুয়ারি দর ৭২.৫০ টাকায় ওঠে। পরবর্তীতে ৫ জুন শেয়ারের দাম আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৮২.৮০ টাকায়। কোম্পানির সেই শেয়ার দর তিন বছর পরে অর্থাৎ, গত বৃহস্পতিবার ১৭ টাকায় লেনদেন হয়েছে। দর কমেছে প্রায় পাঁচ গুণ। বর্তমানে কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।
‘কোম্পানির সম্পদ বিক্রির ফলে মুনাফার ওপর বিশেষ প্রভাব পড়ে, যার কারণে বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার ক্রয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে।’ বলেন আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি মো. এনামুল হক। এ বিষয়ে ‘তদন্তের চিঠি কোম্পানির কর্তৃপক্ষ হাতে পেয়েছে’ বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ২০১৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড। প্রোসপেক্টাস অনুসারে, শেয়ারের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৫০ লাখ ৪১ হাজার ২০৯টি। তার রিপরীতে আইপিওতে পুঁজিবাজার থেকে ৫৬ কোটি ২৫ লাখ ৭ টাকা তুলে নেয়।
২০১৭ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া পারিবারিক কোম্পানিটির ছয় বছরে শেয়ারের পরিমাণ হয়েছে পাঁচ গুণ। অর্থাৎ, ১ কোটি ৫০ লাখ ৪১ হাজার ২০৯টি শেয়ারের বিপরীতে ২০২৩ সালে হয়েছে ৬ কোটি ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৮টি। বোনাস শেয়ারের নামে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ মূলধন বাড়িয়েছে পাঁচ গুণ।
বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে আমরা নেটওয়ার্কের পরিচালনা পর্ষদ। সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২.৪৬ টাকা।
আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির প্রতি শেয়ারে মুনাফা ছিল ২.৪৩ টাকা। গত ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে কোম্পানির প্রতি শেয়ারে নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৭.০১ টাকা।
কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৯২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানির মোট শেয়ার ৯ কোটি ২৯ লাখ ৭৯ হাজার ৯১২টি। ২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩৩.০৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২১.৭১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৫.২৫ শতাংশ শেয়ার আছে। এই কোম্পানির স্বল্পমেয়াদি ঋণ আছে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ১৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
আপনার মতামত লিখুন :