জুমার দিনকে বলা হয় মুমিনের ঈদের দিন। এ দিনটি মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময়। ছোট-বড় সবার জন্য জুমার দিনটি ইবাদত, দোয়া, সাদকা ও আত্মশুদ্ধির এক অনন্য সুযোগ।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জুমার নামাজ আদায়কারীদের জন্য ঘোষিত হয়েছে একাধিক পুরস্কার ও কল্যাণের প্রতিশ্রুতি।
আল্লাহ তাআলা বলেন—‘হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ব্যবসা-বাণিজ্য পরিত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পার।’ (সুরা জুমা, আয়াত ৯)
নিচে হাদিসের আলোকে জুমার দিনে মুসল্লিদের জন্য ঘোষিত ৮টি উল্লেখযোগ্য পুরস্কার তুলে ধরা হলো:
১. দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্ত
জুমার দিন এমন একটি সময় রয়েছে, যখন বান্দার দোয়া কবুল হয়। তবে এই সময়টি গোপন রাখা হয়েছে, যাতে মুমিন বান্দা পুরো দিন ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করে।
হাদিস- ‘জুমার দিনে একটি মুহূর্ত রয়েছে, যখন কোনো মুসলমান বান্দা নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ তাআলা তা অবশ্যই কবুল করেন।’ (বুখারি, মুসলিম)
সম্ভাব্য সময়টি হলো ইমামের মিম্বারে বসা থেকে শুরু করে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অথবা আসরের পর সময়কাল।
২. সাদকার শ্রেষ্ঠতম দিন
হাদিসে বলা হয়েছে, জুমার দিন অন্য দিনের তুলনায় অধিক ফজিলতপূর্ণ সাদকার জন্য। ‘জুমার দিনে সাদকা অন্যান্য দিনের তুলনায় অধিক সওয়াব ও গুরুত্বপূর্ণ।’ (মুসলিম শরিফ)
৩. আল্লাহর সাক্ষাতের দিন
তাফসিরের বর্ণনা অনুযায়ী, জান্নাতবাসীরা প্রতি জুমার দিনে আল্লাহ তাআলার সাক্ষাৎ লাভ করেন। এটি জান্নাতের অনন্য এক সম্মান ও অনুগ্রহ।
৪. সাপ্তাহিক ঈদের দিন
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন হলো মুসলমানদের জন্য এক ঈদের দিন।’ (ইবনু মাজাহ)
এ দিনে গোসল, পরিচ্ছন্নতা ও আতর ব্যবহারের গুরুত্বও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
৫. গোনাহ মাফের সুযোগ
হাদিস অনুযায়ী, জুমার নামাজ সঠিকভাবে আদায় করলে পূর্ববর্তী এক সপ্তাহের গোনাহ মাফ হয়ে যায়। ‘যে ব্যক্তি গোসল করল, পবিত্রতা অর্জন করল, আতর ব্যবহার করে মসজিদে গেল, খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনল— তার পূর্ববর্তী জুমা পর্যন্ত সব গোনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (বুখারি শরিফ)
৬. এক বছরের রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব
জুমার নামাজে আগেভাগে যাওয়া, পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা— এসবের জন্য হাদিসে এক বছরের রোজা ও রাতের তাহাজ্জুদের সমান সওয়াবের ঘোষণা রয়েছে। ‘...তার প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য বছরব্যাপী রোজা ও রাত জেগে ইবাদতের সওয়াব লেখা হয়।’ (মুসনাদে আহমদ শরিফ)
৭. জাহান্নামের আগুন প্রশমিত থাকে
তাফসিরে যাদুল মাআদ অনুযায়ী, সপ্তাহের ছয় দিন জাহান্নামের আগুন উত্তপ্ত রাখা হলেও শুধুমাত্র জুমার দিন তা বন্ধ রাখা হয়। এ দিনটি জাহান্নামের আগুনও স্পর্শ করে না।
৮. জুমার দিনে মৃত্যু— আজাব থেকে মুক্তি
জুমার দিন বা রাত যিনি মৃত্যুবরণ করেন, তার কবরের আজাব মাফ করে দেওয়া হয়। ‘যে মুসলিম জুমার দিন বা জুমার রাতে মারা যায়, আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের আজাব থেকে রেহাই দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি শরিফ)
উল্লেখ্য, মুমিনদের উচিত জুমার দিনকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করা, সময়মতো গোসল করে পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে মসজিদে গিয়ে খুতবা শোনা এবং মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায় করা। জুমার দিনের বিশেষ আমলগুলো নিয়মিত পালন করলে আল্লাহর দেওয়া এই পুরস্কারগুলো অর্জন করা সম্ভব হবে, ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জুমার মর্যাদা উপলব্ধি করে তা যথাযথভাবে পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।