বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ আজ রোববার বিরল পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে ইসলামি পণ্ডিতরা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাহভিত্তিক গ্রহণের নামাজ (সালাতুল কুসুফ)আদায়ের আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স, এনডাউমেন্টস ও যাকাত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাংলাদেশ সময় ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ২৮ মিনিট থেকে শুরু হবে চন্দ্রগ্রহণ। তবে খালি চোখে চাঁদের এই পরিবর্তন খুব একটা বোঝা যাবে না।
রাত ৯টা ২৭ মিনিট থেকে চাঁদের একটি অংশ ধীরে ধীরে কালো হতে দেখা যাবে। রাত সাড়ে ১০টায় পৃথিবীর ছায়া পুরোপুরি চাঁদের উপরে পড়বে। এই মুহূর্তে চাঁদ পুরোপুরি অদৃশ্য হবে না, বরং লালচে বা তামাটে রঙ ধারণ করবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফতোয়া কাউন্সিল স্পষ্ট করেছে, চন্দ্রগ্রহণ আংশিক হোক বা পূর্ণ এটি প্রত্যক্ষ করলে মুসলমানদের জন্য নামাজ আদায় সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। তাই প্রতিটি মুসলমানকে এ সময় নামাজ আদায়ের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কীভাবে পড়তে হয় গ্রহণের নামাজ?
গ্রহণের নামাজ ঐতিহ্যগতভাবে দুই রাকাতে আদায় করা হয়। তবে এর গঠন ও দৈর্ঘ্য সাধারণ নামাজের তুলনায় আলাদা। প্রতিটি রাকাতে কোরআন থেকে দুটি সুরা তেলাওয়াত ও দুটি রুকু থাকে। এতে দীর্ঘ কিয়াম, রুকু ও দোয়া করা হয়, ফলে নামাজ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি দীর্ঘ ও গভীর হয়।
এই নামাজের জন্য আযান বা ইকামা দেওয়া হয় না। পণ্ডিতরা মুসলমানদের দান-খয়রাত, আল্লাহর স্মরণ এবং ইস্তেগফারের (ক্ষমা প্রার্থনা) সঙ্গে নামাজ আদায়ের তাগিদ দিয়েছেন। যদিও সাধারণত মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করা হয়, তবে চাইলে বাড়িতে বা অন্য কোনো বৈধ নামাজের স্থানে এটি আদায় করা যেতে পারে।
গ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বা ফজর উদয় না হওয়া পর্যন্ত দুই রাকাত নামাজ পুনরাবৃত্তি করারও সুপারিশ রয়েছে। ধ্রুপদী আলেমরা মনে করেন, ঈদের নামাজের মতোই এটি জামাতে পড়া উত্তম, যেখানে ইমাম পরে দুটি খুতবা দেবেন।
নবী (সা.)-এর নির্দেশনা
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের দুটি নিদর্শন। কারও জন্ম বা মৃত্যুর কারণে এগুলোর গ্রহণ ঘটে না। তাই তোমরা যখন গ্রহণ দেখবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ করবে এবং তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নামাজ পড়বে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
অতিরিক্ত আমল
গ্রহণের সময় কোনো নির্দিষ্ট দোয়া আবশ্যক নয়। তবে মুসলমানদের তাকবির (আল্লাহর প্রশংসা), ইস্তেগফার, দান-খয়রাত এবং সৎকর্ম বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।
এও বলা হয়েছে, গ্রহণের নামাজ তখনই প্রযোজ্য হবে যখন গ্রহণ সাধারণ মানুষের চোখে দৃশ্যমান হবে। যদি গ্রহণ এতটাই ক্ষীণ হয় যে শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাই তা শনাক্ত করতে পারেন, তবে এ নামাজ আদায়ের বিধান নেই।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন