মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ—যেখানে আনন্দ, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা গেঁথে থাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। আর এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে শিশু-কিশোরদের কাছে পরিচিত একটি মধুর রীতি হলো ঈদ সালামি।
ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঈদ সালামি বা ঈদ উপহার প্রদানের প্রথার গোড়াপত্তন ঘটে মধ্যযুগে ফাতিমীয় খিলাফতের সময়। তখন সমাজের শিশু-কিশোরদের মধ্যে নগদ অর্থ, মিষ্টান্ন বা পোশাক উপহার দেওয়ার রেওয়াজ চালু হয়। পরবর্তীকালে মামলুক শাসনামলে ঈদের সময় পোশাক ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতো। এই বরাদ্দের পরিমাণ নির্ধারিত হতো ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদার ভিত্তিতে।
এর ধারাবাহিকতায় ওসমানীয় আমলে এই প্রথা পারিবারিক পরিসরে বিস্তৃত হয়। পরিবারের জ্যেষ্ঠরা শিশুদের নগদ অর্থ বা উপহার দেওয়া শুরু করেন, যা বর্তমানে ঈদ সালামি নামে পরিচিত। ইসলাম ধর্মের প্রসারের ফলে এই রীতি মধ্যপ্রাচ্য থেকে ছড়িয়ে পড়ে ভারতীয় উপমহাদেশে এবং হয়ে ওঠে এক জনপ্রিয় সামাজিক ঐতিহ্য।
ঈদ সালামির ধর্মীয় ভিত্তি
ইসলামে উপহার প্রদানকে উৎসাহিত করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা একে অপরকে উপহার দাও, এতে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা জন্মায়।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ; হাদিস: ৫৯৪)
ইসলামি মূল্যবোধ অনুসারে উপহার হতে হবে নিঃস্বার্থ ও শর্তহীন। ঈদ সালামির ক্ষেত্রেও এ শিক্ষা কার্যকর।
ঈদের সকালেই শিশুরা সেজে ওঠে নতুন পোশাকে। ঈদগাহে নামাজ আদায়ের পর কোলাকুলির মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয়। এরপরই তারা পরিবারের জ্যেষ্ঠদের সালাম করে ঈদ সালামির আবদার করে। এই নগদ অর্থ বা উপহারই ঈদের আনন্দকে করে বহুগুণ। এটি দিয়ে তারা কেনাকাটা করে, খরচ করে কিংবা জমিয়ে রাখে ভবিষ্যতের জন্য।
শিশুরা আজ যারা সালামি গ্রহণ করছে, একদিন তারাই বড় হয়ে নতুন প্রজন্মকে সালামি দেবে—এভাবেই ঐতিহ্য প্রবাহিত হয় সময়ের সঙ্গে।
সালামির নতুন রূপ
বর্তমানে প্রযুক্তির হাত ধরে ঈদ সালামির রীতিতেও এসেছে পরিবর্তন। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেকে দূর থেকে প্রিয়জনকে সালামি পাঠাচ্ছেন। তরুণ প্রজন্ম এই সুযোগের পুরোটা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে সালামি দাবি করছে বাবা-মা, ভাইবোন বা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে।
ঈদের সময় নতুন নোটের চাহিদা বাড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবছর বাজারে নতুন নোট সরবরাহ করে থাকে, কারণ সালামির অর্থটা নতুন চকচকে হলেই যেন উৎসবের আনন্দ পূর্ণতা পায়।
এক সময় কেবল শিশুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন ঈদ সালামি অনেক বেশি আনুষ্ঠানিকতা ও পারস্পরিক সৌহার্দ্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন অফিস, প্রতিষ্ঠান এমনকি সামাজিক সংগঠনেও এই রীতির চর্চা রয়েছে। এটি এখন ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার একটি মাধ্যম।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবে সালামি এখন একটি ভাইরাল সংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে। হাস্যরস, মিম ও স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে ঈদ সালামি নতুন মাত্রা পাচ্ছে প্রতিটি প্রজন্মে।
ঈদ সালামি শুধু নগদ অর্থ বা উপহারের বিষয় নয়, এটি ভালোবাসা, সম্পর্কের উষ্ণতা ও ঐতিহ্য রক্ষার প্রতীক। ফাতিমীয় খিলাফত থেকে শুরু হয়ে আজকের ডিজিটাল সমাজ পর্যন্ত এই রীতি তার স্বরূপ বজায় রেখে এগিয়ে চলেছে।
ঈদ সালামির মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে ঈদের বিশেষ অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে। একই সঙ্গে পরিবারের জ্যেষ্ঠদের জন্য এটি একটি সুযোগ—তাদের শৈশবের স্মৃতিকে নতুন করে অনুভব করার এবং বর্তমান প্রজন্মকে সেই আনন্দের ভাগীদার করার।

 
                             
                                    

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
       -20251031020255.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন