রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৪, ১২:৪৯ এএম

বিমানের বাধায় সিলেটে নামে না বিদেশি বিমান

সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৪, ১২:৪৯ এএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মর্যাদা পেয়েছে বেশ আগেই। এমনকি আন্তর্জাতিক মানের সব ধাপই উত্তীর্ণ করেছে সিলেট এম এ জি ওসমানী বিমানবন্দর। নিশ্চিত করা হয়েছে বিমান ও যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি। তবু সিলেটে কোনো বিদেশি বিমান নামে না। সিলেট থেকে কোনো বিদেশি বিমান সংস্থা ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে না। বলা হচ্ছে, এর জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘বিমান’। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আপত্তির কারণে সব সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও বিদেশি বিমান সিলেটে ওঠানামা করতে পারছে না!

একাধিক সূত্রের দাবি, গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গায়ের জোরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বিদেশি বিমানের ওঠানামা অনেকটা অলিখিতভাবে ‘নিষিদ্ধ’ করে দেয়। সিলেট থেকে কয়েকটি আন্তর্জাতিক রুটে শুধু বিমান বাংলাদেশ ফ্লাইট পরিচালনা করে। বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো ফ্লাইট পরিচালনার জন্য স্লট বরাদ্দ চাইলেও দেওয়া হয়নি। এমনকি পেয়েও ‘বিমান’-এর আপত্তিতে তা হাতছাড়া করতে হয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সিলেট জোনের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান রুশো চৌধুরী বলেন, বিমানের আপত্তির কারণে সিলেটে অন্য বিমান নামতে পারেনি। ফলে ফ্লাইট শুরু করেও ফ্লাই দুবাইকে চলে যেতে হয়েছে। তিন বছর ধরে বলা হচ্ছে, গ্রাউন্ডিংয়ে জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার উন্নতি না হওয়ায় বিদেশি বিমান নামার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এটি আরোপিত অজুহাত কি না, খুঁজে দেখা দরকার।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সিলেট ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার শাহনেওয়াজ মজুমদার বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশের আপত্তির কারণে অন্য বিমান সিলেট এয়ারপোর্টে স্লট পাচ্ছে না’ এ অভিযোগ সঠিক নয়। বিমান আপত্তি করার কোনো কারণই নেই। বিষয়টির পূর্ণ এখতিয়ার সিভিল অ্যাভিয়েশনের। তারা নির্ধারণ করবে সিলেটে বিদেশি বিমান নামবে কি না।

সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যানেজার হাফিজ আহমদ বলেন, স্লটের সীমাবদ্ধতা থাকলেও আমাদের সক্ষমতা আছে বিদেশি বিমান ওঠানামা করানোর। সরকার অনুমতি দিলে যেকোনো বিমান এখানে নামতে পারবে। তবে তিনি বলেন, ফ্লাই দুবাই বিমানের আপত্তির কারণে নয়, নিজেদের প্রয়োজনেই তারা সিলেট থেকে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, সিলেট থেকে বিমান ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ দেখিয়ে অনুমতি চেয়েছিল কয়েকটি বিদেশি বিমান সংস্থা। এদের মধ্যে ছিল অ্যামিরেটস, এয়ার আরাবিয়া, সৌদিয়া এয়ারলাইনস, ফ্লাই দুবাইসহ বেসরকারি কয়েকটি বিমান সংস্থা। বিগত সরকারের সময় শুধু ফ্লাই দুবাই অনুমতি পেয়ে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করতে পেরেছিল। সিলেটের জেল রোডের চেম্বার ভবনের পাশে করেছিল অফিসও। কিন্তু এক বছরের মাথায় সবকিছু গুটিয়ে সিলেট থেকে তাদের চলে যেতে হয়েছে।

অ্যাভিয়েশন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হলি গ্রুপের এমডি সাহেদ আহমদ বলেন, ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট হলেও বিদেশ থেকে শুধু দেশীয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসই এসে নামে, বিদেশি বিমান নয়। দেশীয় বিমান এসে নামলে সেটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয় না। তার প্রশ্ন, কেন এই এয়ারপোর্টকে পূর্ণাঙ্গতা দেওয়া হচ্ছে না? কেন বিদেশি বিমান নামতে দেওয়া হয় না?

অ্যাভিয়েশন সূত্র জানায়, শুরুতে এয়ার আরাবিয়া ও ফ্লাই দুবাইকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যাত্রী হারানোর ভয়ে পরে এয়ার আরাবিয়াকে আর নামতে দেওয়া হয়নি। বছরখানেক শুধু ফ্লাই দুবাই নামতে পেরেছিল। তারা কম পয়সায় ভালোই সেবা দিচ্ছিল। কিন্তু বিস্ময়করভাবে বছরখানেকের মধ্যে তারও স্লট কেড়ে নেওয়া হয়। সিলেট ওসমানী এয়ারপোর্ট থেকে বিদেশি একাধিক বিমান সংস্থা বিভিন্ন গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি আর পায়নি। সেই থেকে বিভিন্ন অজুহাতে তাদের স্লট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।

সূত্রমতে, সিভিল অ্যাভিয়েশন থেকে তৎকালীন বিদেশি বিমানকে ওঠানামার অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম আবুল মাল আবদুল মুহিতের বিশেষ আগ্রহে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে সম্প্রসারণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা এখন বাস্তবায়নের পথে। এ সময়ই প্রথম ধাপে ফ্লাই দুবাই ও এয়ার আরাবিয়াকে অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে শুধু ফ্লাই দুবাই সিলেট-দুবাই ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পায়। এ সময়ও আপত্তি জানায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। রাষ্ট্রীয় এই সংস্থার আপত্তির কারণে সিভিল অ্যাভিয়েশন সিলেট এয়ারপোর্টকে ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস’-এর বিমান ছাড়া বিদেশ থেকে আসা আর কোনো বিমানকে নামতে বা ফ্লাইট পরিচালনা করতে অনুমতি দেয়নি। আগ্রহ প্রকাশ করলেও তার কূটকৌশলে বিশ্বের নামিদামি বিমান সংস্থা সিলেট থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সরকারকে বুঝিয়েছিল, অন্য সংস্থাগুলো সিলেট থেকে ফ্লাইট শুরু করলে বিমান তার ব্যবসা হারাবে। তারা উদারহণ হিসেবে ফ্লাই দুবাইকে সামনে নিয়ে আসে। ফ্লাই দুবাই তখন প্রতিদিন সিলেট থেকে কম খরচে সিলেট-দুবাই হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। লন্ডনের যাত্রীরাও বিমানের চেয়ে ফ্লাই দুবাইয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। তখন বিমানের ফ্লাইট যেত খালি! ফলে অব্যাহত যাত্রী হারানোর ভয়েই রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা সিলেট থেকে বিদেশি বিমানের ওঠানামায় নিজেদের আপত্তিকে আরও জোরালো করে তোলে। বিমান এ অবস্থায় সিভিল অ্যাভিয়েশনকে বুঝিয়ে শেষমেশ বিদেশি বিমান সংস্থাকে নামতে না দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে সক্ষম হয়। বিমানের ‘লোকসান’ ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থাটির এই ‘অন্যায় আবেদন’ মেনে নেয় সিভিল অ্যাভিয়েশন। তারপর থেকে এককভাবে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সিলেট থেকে কয়েকটি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সিলেট থেকে লন্ডন, ম্যানচেস্টার, জেদ্দা, দুবাই, মাস্কাট, শারজাসহ অন্য রুটে তারা দেশের সর্বোচ্চ ভাড়ায় ফ্লাইট পরিচালনা করে। ব্যবসায়ীদের মতে, যাত্রীদের কাছ থেকে বিমানের নেওয়া ভাড়ার অঙ্ক অস্বাভাবিক এবং আজগুবিও। ঢাকা-সিলেট-লন্ডন রুটে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে একই ফ্লাইটে লন্ডনে গেলে যে ভাড়া দিতে হয় ঢাকার যাত্রীকে, সিলেট থেকে লন্ডনে যাতায়াতকারী যাত্রীকে তাদের থেকে অনেক বেশি ভাড়া গুনতে হয়। একই ভাড়া পলিসি নির্ধারণ করা লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে ঢাকায় যাওয়া যাত্রীদের বেলায়ও। যারা সিলেটে নেমে যান, তাদের চেয়ে ১০-১৫ হাজার টাকা কম ভাড়ায় ঢাকা পর্যন্ত যেতে পারেন। সিলেটের জন্য এমন ভাড়া বৈষম্য লাগিয়ে রেখেছে বিমান।

বিমানের এমন আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছেন সিলেটবাসী। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা সিলেট কোর্ট পয়েন্টে আটাবসহ কয়েকটি দেশি ও বিদেশি বাংলাদেশি সংগঠনের ব্যানারে সিলেট বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পূর্ণাঙ্গতা দিতে এবং ভাড়াবৈষম্য দূর করতে মানববন্ধনের আয়োজন করে। এর দুই দিন আগে বুধবার এই ভাড়াবৈষম্য নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সঙ্গে আটাব সিলেট জোনের বৈঠক হয়।

এতে সিলেটের যাত্রীদের প্রতি বিমান যে ভাড়াবৈষম্য করছে, তা নিরসনের জোর দাবি জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সিলেট ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার শাহনেওয়াজ মজুমদার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা ঢাকাকে সিলেট আটাবের দাবিগুলো জানিয়েছি। পাশাপাশি সিলেটবাসীর দাবির কথাও জানিয়েছি।

সিলেটের একাধিক ট্রাভেল এজেন্সির মালিক বলেন, এখন সব পাল্টেছে। কিন্তু সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে সেই বৃত্ত থেকে বের করে আনছে না সিভিল অ্যাভিয়েশন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কারণে সব সম্ভাবনা ও সুযোগ থাকার পরও সিলেট এমএজি ওসমানী এয়ারপোর্টকে পূর্ণাঙ্গ এয়ারপোর্টে পরিণত হতে দেওয়া হচ্ছে না!

বিএনপি নেতা, প্রবাসী বাংলাদেশি বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক খান বলেন, সময় এসেছে সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গতা দেওয়ার। বিদেশি বিমানকে নামতে-উঠতে দেওয়ার। দেশীয় যেসব বেসরকারি বিমান সংস্থা সিলেট থেকে সরাসরি দেশের বাইরের যেসব রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়, তাদেরও সেই সুযোগ দেওয়া উচিত। যাত্রীরা কম খরচে এবং তাদের পছন্দের বিমানে যাতে বিদেশে যাওয়া-আসা করতে পারেন, সেই সুযোগ দিতে হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!