শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রুবেল রহমান

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম

শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা-তারেক বৈঠক

রুবেল রহমান

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান। ছবি- সংগৃহীত

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান। ছবি- সংগৃহীত

লন্ডন সফরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার একটি বৈঠক হবে বলে চূড়ান্ত হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ঢাকা ও লন্ডনের ক‚টনৈতিক সূত্রগুলো। তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির দিক থেকেও সাক্ষাৎ ও বৈঠক নিয়ে ইতিবাচক সাড়া থাকায় গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকটি হতে যাচ্ছে।

এ নিয়ে সরকারের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তা চূড়ান্ত। ১৩ জুন সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে তাদের বৈঠকটি হবে। লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হবার কথা রয়েছে।

বৈঠকে কোনো বিশেষ এজেন্ডা আছে কি না জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য সমঝোতা বা কৌশলগত অবস্থান নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন সফরকালে বাকিংহাম প্যালেসে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন এবং গ্রহণ করবেন ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’। এ ছাড়া দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। দুই সরকারপ্রধানের বৈঠকে সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে ব্রিটেনের সমর্থন চাইবে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান। অন্যদিকে ব্রিটেনের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গ উঠলে তাদের দেশে এনে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ব্রিটেনের সাহায্য চাইবে ঢাকা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে ড. ইউনূসের বৈঠক ইস্যুতে ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু হয়েছে যুক্তরাজ্যে। ইউকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, পারভেজ মল্লিক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, এই বৈঠক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বৈঠকের দিন হোটেলের বাইরে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। তাদের আশা, ভালো কিছু হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপি শীর্ষ নেতার বৈঠকে।

ঐকমত্যের কথা বলা হলেও হঠাৎ করে এর বাইরে গিয়ে এপ্রিলে নির্বাচনের সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে দেখছে না বিএনপি। কার স্বার্থে এপ্রিলে নির্বাচন করতে চায় সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি নেতারা। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বৈঠকে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে কিছু যুক্তি তুলে ধরবেন। বিএনপি কেন ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়, সেই বাস্তবতা বোঝানোর চেষ্টা করবেন। এপ্রিল কিংবা জুন নির্বাচনের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। আমাদের বিশ্বাস প্রধান উপদেষ্টা বাস্তবতা বুঝতে সক্ষম হবেন এবং তার দেয়া সিদ্ধান্ত বিবেচনা করবেন।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক। এই বৈঠকের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট কাটবে বলে আশাবাদী বিএনপি, এমনটাই জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে এ কথা জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে যে গুঞ্জন উঠে তার পূর্ণতা পায় গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। মির্জা ফখরুল বলেন, স্থায়ী কমিটি বৈঠকে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিভাবে এই বৈঠক গুরুত্ব ও সম্ভাবনা অনেক। এই বৈঠক থেকে অনেক কিছুর ডাইমেনশন হতে পারে। দলের স্থায়ী কমিটি তারেক রহমানকে যেকোনো বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দিয়েছে বলেও জানান বিএনপির এ নেতা। আগামী ১৩ জুন লন্ডন সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে হবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক।

উল্লেখ্য, ড. ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের ঘোষণা আসার পর থেকেই তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে রাজনীতি অঙ্গনে আলোচনা চলছিল। যদিও শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার আনুষ্ঠানিক সফর সূচিতে বৈঠকের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আগামী ১৩ জুন লন্ডনে সাক্ষাৎ করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত সোমবার সন্ধ্যায় তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সাক্ষাতের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে সর্বসম্মতভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের সৌজন্য সাক্ষাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। জানা গেছে, সাক্ষাৎটি আগামী ১৩ জুন হতে পারে।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা জানান, সংসদ নির্বাচন হবে ২০২৬-এর এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন। এরপর থেকেই চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করা বিএনপির সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েন চলছিল। 

তিনি আরও জানান, এই টানাপোড়েনের মাঝেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তারেক রহমান। এ বৈঠকের পর সরকারের সাথে বিএনপির আপাত দূরত্ব কিছুটা কমবে বলেও মনে করা হচ্ছে। ইউনূস-তারেক বৈঠক এই মুহূর্তে রাজনীতির প্রধান ইভেন্ট বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রাজনৈতিক সংকট কাটাতে বৈঠকটি টার্নিং পয়েন্ট

মির্জা ফখরুল বলেন, এই মিটিংয়ের জন্য আমাদের স্ট্যাডিং কমিটির পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি যে, এটা বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংকট কাটাতে পজেটিভ ভূমিকা রাখতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে, সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটা (বৈঠকটি) একটা বড় ইভেন্ট। এটা একটা টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে যদি সব সঠিকভাবে চলে তাহলে নিঃসন্দেহে এটা একটা বড় টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। আমার মনে হয় যে, এই সময়ের মধ্যে সবচাইতে ইম্পরটেন্ট ইভেন্ট, এই মিটিংয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। আমি মনে করি, জাতীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবেও এটা গুরুত্ব অনেক বেশি।

বৈঠকের ভেন্যু কোথায়

বৈঠকের স্থান কোথায় জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, লন্ডনে যে হোটেলটিতে (হোটেল ডোরচেস্টার) উনি প্রধান উপদেষ্টা আছেন সেটাতেই ভেন্যু। ওখানেই তার সঙ্গে ইংল্যান্ডের হাউস অব কমন্সের ডেপুটি লিডার অব দি হাউস দেখা করবেন। তারেক রহমান সাহেবের বৈঠকের পরে অন্যান্য নেতা যারা আছেন তারা ওখানেই দেখা করবেন।

পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক গত ৪ জুন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে কোনো তথ্য তার কাছে নেই।

চার দিনের সরকারি সফরে গত সোমবার সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন। ২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময় কারামুক্ত হয়ে সপরিবারে লন্ডনে চলে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। আওয়ামী লীগের সময়ে তার অনুপস্থিতিতে পাঁচ মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়। দায়ের করা হয় শতাধিক মামলা। আদালতের চোখে তিনি হয়ে যান ‘পলাতক আসামি’। এমনকি তার বক্তব্য বিবৃতি প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা আসে।

এর মধ্যে পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে হয়। ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু আর মায়ের কারাগারে যাওয়ার মতো দুঃসময়েও তার দেশে ফেরা হয়নি। জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। যেসব মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছিল, একে একে তার সবটিতেই খালাস পান খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। মুক্ত খালেদা এ বছরই চিকিৎসার জন্য লন্ডন ঘুরে এসেছেন। সেখানে ছেলের বাসাতেই তিনি ছিলেন। তারেকের স্ত্রী জুবাইদা রহমানও ১৭ বছর পর গত মে মাসে ঢাকা ঘুরে যান। কিন্তু তারেক কবে ফিরবেন, তার উত্তর বিএনপি নেতাদের কাছে নেই। তারা বলে আসছেন, ‘সময় হলেই’ তারেক রহমান ফিরবেন। 

এমন এক সময়ে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে তার বৈঠক হতে যাচ্ছে, যখন নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মতবিরোধ রয়েছে আলোচনার কেন্দ্রে। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলে আসছিলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার সেরে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হতে পারে। কোরবানি ঈদের আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ভোটের সময় তিনি দুমাস এগিয়ে এপ্রিল মাসের প্রথমার্থে যেকোনো দিন ভোট হতে পারে বলে জানান।

কিন্তু ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়ে আসা বিএনপি ওই ঘোষণায় দারুণ হতাশ। কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব না, আর কেন এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, তার কোনো যুক্তি তারা দেখছে না। ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। কমিশনের হাতে জমা পড়া অনেক সুপারিশের সঙ্গে বিএনপির মতপার্থক্য রয়েছে। দলটি মনে করে, সংবিধান সংস্কারের মতো কাজ নির্বাচিত সরকারের সময় জাতীয় সংসদেই হতে হবে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সেটা করা চলবে না। অন্যদিকে অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল এনসিপি নির্বাচনের আগেই গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের পক্ষে। 

Link copied!