বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫, ০১:৪০ এএম

ডিসেম্বরে নির্বাচন অনিশ্চিত

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫, ০১:৪০ এএম

ডিসেম্বরে নির্বাচন অনিশ্চিত

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষিত চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

এবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদে সাড়ে ১৮ লাখ নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, যারা ২০২৬ সালের ২ জানুয়ারি ভোটারযোগ্য হবেন। চলতি বছরের ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে তারা ভোট দিতে পারবেন না।

এ ছাড়াও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইনের সংশোধনের কারণে আটকে আছে যাবতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি।

কেননা এই দুটি আইনে কী কী সংশোধন আনা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।

আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা ছাড়া কমিশনকে কোনো ধরনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে সংসদ নির্বাচনের জন্য কাক্সিক্ষত প্রস্তুতি নেই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির।

পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে ‘সিএসপি’ কর্মকর্তা ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, নিজেরা তারিখ নির্ধারণ না করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে একটা সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা উচিত।

আর কিছুদিনের জন্য সাড়ে ১৮ লাখ ভোটারকে ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ঠিক হবে না।

সম্প্রতি জাপানের ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে (এনএইচকে) দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যা ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।

ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের নির্বাচন সবচেয়ে দ্রুত সময় হতে পারে এ বছরের শেষ দিক। যখন নির্বাচন হবে, যারা নির্বাচিত হবে, তারা কাজ করার জন্য শক্তিশালী একটি ভিত্তি পাবে।

ইসির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত ডিসেম্বরকে টার্গেট করে প্রস্তুতি শুরু করেছিল কমিশন। সেই লক্ষ্যে গত ২০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম হয়।

সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য ৪১ আসনের ২৪৮টি আবেদন পড়ে। কিন্তু সংস্কার কার্যক্রমের কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তুতির কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না ইসি। এমনকি নির্বাচনি রোডম্যাপও করা সম্ভব হচ্ছে না। আপাতত সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় বসে আছে নির্বাচন কমিশন।

তবে এরই মধ্যে ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন’ এবং ‘ভোটার তালিকা আইন’ এর খসড়া আরও যাচাইয়ের জন্য ইসির সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।

এ দুটি আইন সংশোধনের জন্য নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করবে ইসি। তবে সীমানা নির্ধারণ আইনের ‘৮’ ধারায় নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমানোর বিদ্যমান বিধান সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, অযথা সময়ক্ষেপণ করে সরকারে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই তাঁদের। তাঁরা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র মেরামতের মৌলিক শর্ত পূরণ করতে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সংস্কারগুলো অতি জরুরি, সেগুলো করার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলে যেতে চান।

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে আলাদা স্বাধীন কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শর্ত শিথিলের সুপারিশ করেছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ শতাংশ জেলা এবং ৫ শতাংশ থানা অফিসের কথা বলা হয়েছে।

বর্তমান আইনে বলা আছে, একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা কার্যালয় এবং অন্তত ১০০টি উপজেলায় কার্যালয় থাকতে হবে।

এ ছাড়াও ভোটার তালিকার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, তপশিল ঘোষণার আগে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কিন্তু সরকার থেকে নির্বাচন কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে এখনো কিছুই জানানো হয়নি।

জানা গেছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে বাদ পড়া ও নতুন ভোটারযোগ্য ব্যক্তি মিলিয়ে ৪৯ লাখ ৭০ হাজার ৩৮৮ জনের তথ্য সংগ্রহ করেছে ইসি।

এর মধ্যে বাদ পড়া ভোটার ৩১ লাখ ২৭ হাজার ৫১৯ জন আর নতুন ভোটার ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৬ জন। এবার হালনাগাদে যারা যুক্ত হচ্ছেন, তাদের কাজ জুনের মধ্যে শেষ করতে চায় ইসি।

ইসির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নতুন ভোটার নিয়ে নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। ডিসেম্বর ভোট হলে নতুন তথ্য সংগ্রহ করা অনেকেই ভোটার তালিকাভুক্ত হতে পারবেন না।

আর ২ জানুয়ারির পর ভোট হলে নতুন করে যাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তাদের সবাই তালিকাভুক্ত হতে পারবেন। কেননা এবার যাদের জন্ম ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

এই সংখ্যা মূলত সাড়ে ১৮ লাখ। যারা ২০২৬ সালের ২ জানুয়ারি ভোটার হবেন। এই নতুন ভোটারকে সামনে এনে ভোট পেছানো হতে পারে বলে ধারণা করছে ইসির সংশ্লিষ্টরা।

এক্ষেত্রে ২০২৬ সালের ৩ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করে এপ্রিল-মে মাসে ভোট করার ক্ষেত্রে সরকারের আগের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হতে পারে।

ইসির সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন দ্রুত নতুন দলের নিবন্ধন-বিজ্ঞপ্তি জারি করতে প্রস্তুত। কিন্তু ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ছাত্ররা কবে, কখন রাজনৈতিক দল করবে, তারপর নতুন দল নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি হবে। এতে করে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি যথেষ্ট ঘাটতি হবে।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় এক থেকে দেড় মাস সময় দিয়ে। তারপর আবেদন যাচাই-বাছাই করে মাঠ প্রশাসনের কাছে পাঠাতে হয়।

এরপর ওই তথ্য আসার পর পরবর্তী পদক্ষেপ। এই কার্যক্রম করতেও প্রায় পাঁচ মাস লেগে যাবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে অন্ধকারে ইসি।

একইভাবে সীমানা পুনর্নির্ধারণ কাজও হচ্ছে না। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী সংসদে আসন পদ্ধতি কি হবে? এক কক্ষ না দ্বিকক্ষ সংসদ হবে, তাও জানে না ইসি।

ইসি সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সংস্কার প্রস্তাব সম্পূর্ণ করে আইন সংশোধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে কমপক্ষে আগামী জুন-জুলাই মাস লেগে যাবে।

সংস্কারের প্রক্রিয়াটি অনেকটাই মন্থরগতিতে এগোচ্ছে। ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন করতে হলে অক্টোবরের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করতে হবে।

তপশিলের আগে ভোটার তালিকা প্রস্তুত, নতুন দলের নিবন্ধন, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, পর্যবেক্ষক নীতিমালা তৈরি, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচনি মালামাল কেনা এসব করতে অনেক সময় লেগে যাবে।

এসব বিষয়ে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা না থাকায় এভাবে চলতে থাকলে ডিসেম্বরে কোনোভাবেই ভোট করা সম্ভব নয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সংস্কারের পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। সংস্কার বাস্তবায়নের একমাত্র পথ নির্বাচন। বরং সংস্কারের আলাপ যত দীর্ঘায়িত হবে, দেশ তত সংকটে পড়বে। এতে সুযোগ নেবে ষড়যন্ত্রকারীরা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে নই আমরা।’

আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানান তিনি। তবে বিএনপির দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।

অন্যদিকে, জামায়াতের আমীর ড. শফিকুর রহমান জানান, জামায়াত ডিসেম্বর বা তার কিছু পরে নির্বাচনের পক্ষে।

তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসিরউদ্দিন বলেন, সংস্কার কার্যক্রমের কারণে প্রস্তুতিতে আমরা আটকে আছি। এখনো পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং সীমানা পুনর্নির্ধারণ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।

দুটি আইন সংশোধন হবে নাকি বিদ্যমান আইনে কার্যক্রম শুরু করব সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। এ বিষয়ে সময়ক্ষেপণ হলে প্রস্তুতিতে আমরা পিছিয়ে যাব। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে।

গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যদি অল্পকিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে।

আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে আরও অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। 

মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।

গতকাল রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীন বলেছেন, রাজনীতির কাছে নির্বাচন কমিশনকে সপে দেওয়ার কারণে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা সংকটে পড়েছে।

ইলেকশন কমিশনের এত বদনাম, এত গালি দেয়, এটা কেন হলো? ১০০টা কারণ বলতে পারবেন, ২০০টা কারণ বলতে পারবেন। কিন্তু আমার কাছে এক নম্বর কারণ হলো পলিটিক্যাল কন্ট্রোল অব দ্য ইলেকশন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা ফেরাতে সংস্থাটির ওপর রাজনীতিকদের প্রভাব বিস্তার বন্ধ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সিইসি।

সিইসি বলেন, আমরা যথাযথ নির্বাচন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সে জন্য আমাদের বাংলাদেশের সবার সহযোগিতা লাগবে। আমাদের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়, যদি না আমরা সবার সহযোগিতা পাই।

আরবি/জেডআর

Link copied!