শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৫, ১০:১৩ এএম

মাধ্যমিকে শিখন ঘাটতির শঙ্কা

উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৫, ১০:১৩ এএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চলতি শিক্ষাবর্ষে এখন পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরের শতভাগ শিক্ষার্থী বই পায়নি। বইয়ের অভাবে স্কুলগুলোতে গত দুই মাসে এই স্তরের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে ক্লাস হয়নি। ফলে এই সময়ে বিষয়ভিত্তিক সিলেবাসের সামান্য অংশই শ্রেণিকক্ষে পড়ানো সম্ভব হয়েছে। 

এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার শেষ ক্লাসের মাধ্যমে পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরসহ ৪০ দিনের ছুটি শুরু হয়েছে স্কুলে। এই ছুটির পর আবার আগামী ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এ সময় সারা দেশের প্রায় চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকবে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র। কেন্দ্র থাকা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকবে এক মাসেরও বেশি।

চলতি শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকে ক্লাস না হওয়া ও দীর্ঘ ছুটির কারণে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক শিখন ঘাটতির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। এ বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ছুটির বিষয়টি পুনরায় বিবেচনার জন্য ইতিমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। 

অন্যদিকে যানজটসহ নানা বিড়ম্বনা এড়াতে ছুটি শুরু হলেও স্কুলের মতোই দীর্ঘ সময়জুড়ে রাজধানীর কোচিং সেন্টারগুলোতে চলছে ক্লাস। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, স্কুল বন্ধ রেখে কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের ভিড় আগামীতে শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা জানিয়েছেন, এসব ছুটির ঘোষণা দিয়ে স্কুলের নোটিশে বলা হয়েছে, পবিত্র রমজান মাস, শুভ দোলযাত্রা, স্বাধীনতা দিবস, জুমাতুল বিদা, শবেকদর ও ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ হবে ৮ এপ্রিল। 

এর দুই দিন পর ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে, সেসব প্রতিষ্ঠানেও টানা ছুটি থাকবে এক মাসেরও বেশি। 

এদিকে ২০ রমজান পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম চালু রাখার আবেদন জানিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মাউশির মহাপরিচালকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের হাতে এখনো সব বই পৌঁছায়নি। ফলে গত দুই মাসে সেভাবে পড়াশোনা হয়নি। শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি রয়ে গেছে। এর মধ্যে স্কুলে দীর্ঘ ছুটি থাকলে ঘাটতি আরও বাড়বে। তাই অন্তত ২০ রমজান থেকে যেন এই ছুটি দেওয়া হয়। এ ছাড়া অনলাইনে পাঠদানের ব্যবস্থাও রাখা যেতে পারে।

এ বিষয়ে ফোরামের সভাপতি গতকাল শনিবার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, শিখন ঘাটতির শঙ্কা প্রকাশ করেই মাউশির মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছি। তবে এখনো কোনো সমাধান হয়নি।  

কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের একটি সিন্ডিকেট এসব ছুটির কারণে লাভবান হয় মন্তব্য করে তিনি জানান, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে রোজায় অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার একটি সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারের কাছে ব্যাপকভাবে জিম্মি হয়ে পড়ছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত ক্লাসের গুরুত্বের বিষয়টি স্বীকার করেছেন রাজধানীর একাধিক সরকারি স্কুলের শিক্ষক। বিশেষ করে যারা ২০২৬ সালে  এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেবে তাদের ক্ষেত্রে শিখন ঘাটতি ব্যাপক হবে বলেই তারা মনে করেন। 

নাম প্রকাশ না করে এসব শিক্ষক জানিয়েছেন, এটি নতুন সমস্যা নয়। তবে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে হয়তো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও বিষয়টির সমাধান করতে পারছেন না। তবে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য এ বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি।

দীর্ঘ ছুটির কারণে ‘মারাত্মক’ শিখন ঘাটতি হবে মন্তব্য করে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, বই পায়নি, ক্লাস ভালো চলেনি। ছুটির পর সিলেবাস কাভার করা মুশকিল হবে। 

তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে ডাবল শিফটের স্কুলে পদের চেয়ে সহকারী শিক্ষক রয়েছেন অতিরিক্ত। অন্যদিকে উপজেলার স্কুলগুলোতে পদের চেয়ে সহকারী শিক্ষকের সংখ্যা রয়েছে কম। সার্বিকভাবে শিক্ষায় সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন এই জ্যেষ্ঠ শিক্ষক।

এ বিষয়ে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এবার অন্য রকম একটি পরিস্থিতির কারণে বই পাওয়াসহ নানা সমস্যা হয়েছে ঠিকই। আমরা অভিভাবক ফোরামের চিঠিও পেয়েছি একদম ছুটি শুরুর আগমুহূর্তে। তারপরও বিষয়টি নিয়ে আমি মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি। এ ক্ষেত্রে জনমত তৈরি হলে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করাই যেতে পারে।

এদিকে রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের একাধিক স্কুলের শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছে, গত দুই মাসে তাদের শ্রেণির সিলেবাসের খুব সামান্যই পড়ানো হয়েছে। অনেক বই পড়ানোই হয়নি। 

ঢাকার একটি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শেণির বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, গত দুই মাসে পদার্থবিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত বিষয় পড়ানোই হয়নি। কেমিস্ট্রির ছয়টি অধ্যায়ের মধ্যে মাত্র ১টি পড়ানো হয়েছে। 

বায়োলজির ৭টি অধ্যায়ের মধ্যে মাত্র ১টি পড়ানো শুরু হয়েছিল। সাধারণ গণিত ৭টি অধ্যায়ের মধ্যে মাত্র ১টি শেষ হয়েছে। বাংলা প্রথম পত্রের ১৪টি গল্প ও কবিতার মধ্যে মাত্র ২টি পড়ানো হয়েছে। তবে ইংরেজি ও সমাজবিজ্ঞান বিষয় ভালো পড়ানো হয়েছে।

মতিঝিল মডেল স্কুলে দশম শ্রেণির বাণিজ্য শাখায় হিসাববিজ্ঞানের ৬টি অধ্যায়ের মধ্যে ২টি, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিষয়ের ১টি অধ্যায়, সাধারণ গণিতের ৮টি অধ্যায়ের মধ্যে ১টি, গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে ১০টি অধ্যায়ের মধ্যে ২টি পড়ানো হয়েছে। তবে বাংলা প্রথম পত্র ও ব্যবসায় উদ্যোগ ভালো পড়ানো হয়েছে।  

নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে বাংলা বিষয়ের ১১টি গল্প ও কবিতার মধ্যে ৩টি, ইংরেজিও প্রায় একই, সাধারণ গণিত বিষয়ে শুধু বীজ গণিত অংশের একটি অধ্যায় পড়ানো হয়েছে। তবে বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিষয় ভালো পড়ানো হয়েছে।

এদিকে সিলেবাসের সামান্য অংশ পড়িয়ে দীর্ঘ ছুটিতে গেলেও স্কুলের দীর্ঘ সময়ের আদলে রাজধানীর কোচিং সেন্টারগুলোতে চলছে টানা ক্লাসের সূচি। রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়ারি, মতিঝিল ও লক্ষ্মীবাজারের এসব কোচিং সেন্টারে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এক বা একাধিক ব্যাচে দুটি বিষয় শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। 

মতিঝিল ও লক্ষ্মীবাজের উদ্ভাস কোচিং সেন্টারে ৩টা থেকে ৮টা পর্যন্ত সপ্তাহে প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা করে ছেলে-মেয়েদের আলাদা ক্লাস চলে। গোলাপবাগের সেইফ একাডেমি কোচিং সেন্টারে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ১১টা ও অন্যান্য শ্রেণিতে একই নিয়মে ক্লাস চলে। স্কুল বন্ধ থাকায় কোচিং সেন্টারগুলোতে শিক্ষার্থীদের চাপও লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে গেছে।

 

 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!