মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা ছুটছেন বসুন্ধরায়

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৫, ১২:৩৮ এএম

মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা ছুটছেন বসুন্ধরায়

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীর অভিজাত শপিং মল বসুন্ধরা সিটিতে জমে উঠেছে কেনাকাটা। যারা ভিড় এড়াতে আগে-ভাগেই কেনাকাটা সেরে ফেলতে চান এবং যাদের গ্রামে ফেরার তাড়া আছে তারা সবাই ছুটছেন বসুন্ধরায়। 

বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষরা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দেদারসে করছেন কেনাকাটা। ক্রেতাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী। 

ইফতারের পর ক্রেতাদের ছাপ কয়েকগুণ বিক্রি পাওয়ায় দম ফেলার ফুসরত মেলে না বিক্রেতাদের। ক্রেতাদের এই বাড়তি চাপের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী ১৫ রমজানের পর থেকে শপিং মলটি  সাহরি  বা সারা রাত শপিং মলটি খোলা রাখার কথা ভাবছেন কর্তৃপক্ষ। 

রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা শপিং মলে সারা বছরই কেনাকাটায় আগ্রহ থাকে শহরবাসীর। তবে, ঈদের কেনাকাটায় সব সময়ই এই শপিং মলে সব বয়সি মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে বলে জানান লেভেল সিক্সে বাটা শো-রুমের বিক্রেতা মামুন হাসান। 

তিনি জানান, এবার এই শপিং মলে রোজার শুরু থেকেই ক্রেতার ব্যাপক চাপ দেখা যাচ্ছে। ছুটির দিন ছাড়াও স্বাভাবিক দিনগুলোতেও ভিড় চোখে পড়ার মতো। আর্টিসান ফ্যাশনের ভিতরে দেখাযায়, ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়ের দৃশ্য।  

আর্টিসানের ম্যানেজার বলেন, এবার রোজার প্রথম থেকেই ক্রেতাদের সমাগম চোখে পড়ার মতো। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে, এই ভিড় আরও বাড়তে থাকবে। ক্রেতার আগ্রহ বাড়াতে তাদের কথা মাথায় রেখে নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক নিয়ে এসেছি আমরা। তিনি বলেন, ঈদকে উদ্দেশ্য করে আমাদের কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। এ জন্য ক্রেতারাও আমাদের পণ্য কিনে খুশি।

ইজি ফ্যাশনের বিক্রেতা নাজমা লাকী বলেন, বসুন্ধরা সিটিতে যেটা দেখে আসছি  ঈদ যত ঘনিয়ে আসে ভিড় তত বাড়ে, এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটছে না ইতিমধ্যে তার আভাস পেয়েছি ।

জনসমাগম যত বাড়ছে বেচা-বিক্রিয়ও বাড়ছে একইসাথে। ভালো বিক্রি হচ্ছে রোজার শুরু থেকেই, এখন ভিড় বাড়ছে প্রতিদিনই। কেনাকাটা করতে আসা আপন মির্জা বলেন বলেন, আমি আমার বাচ্চা ও তাদের মায়ের জন্য শপিং করলাম। 

একটু আগেভাগে শপিং সেরে ফেললাম কারণ, তারা গ্রামে চলে যাবে। কেনাকাটার জন্য বসুন্ধরাতে কেন আসি যদি বলি তবে বলতে পারেন, শিশু আইটেম থেকে শুরু করে সব কিছুই একই ছাদের নিচে পেয়ে যায় কষ্ট কম হয়। যদিও গতবারের থেকে এবার বেশ আগেভাগেই ভিড়টা বেশিই লক্ষ করা যাচ্ছে।

তন্ময় কুমার নামের নামের এক ক্রেতা বলেন, আমি মুসলিম নই তবুও ঈদে কেনাকাটা করতে আমার খুবই ভালো লাগে যে জন্যই আজ এসেছি। অনেক কিছুই কেনা হলো, আমার অনেক মুসলমান বন্ধু রয়েছে তাদের জন্য ঈদের পোশাক কিনেছি। তাদেরকে উপহার দিতে পারলে নিজের কাছে ভালো লাগে।  তারাও আমাকে পূজার সময় নানা উপহার দেয়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, বসুন্ধরার দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায়- ইজি ফ্যাশন, আর্টিসান, টুয়েলভ, জেন্টল পার্ক, ইনফিনিটি, রিচম্যান, লুবনান, দর্জিবাড়ি, ইল্লিয়্যিন, ক্যাটস আই, এমব্রেলা, ফিট এলিগ্যান্স, রাইজ, র’নেশন, প্লাস পয়েন্ট প্রভৃতি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের একাধিক শোরুম। সবগুলোতেই ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। 

নিচতলায় ইয়েলোর শোরুমে দেখা গেল উপচে পড়া ভিড়। নতুন আসা পোশাক দেখছেন ক্রেতারা। ক্রেতা মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি পাঞ্জাবি ইয়েলো থেকেই নেওয়ার চেষ্টা করি সব সময়, এদের দাম ও মানটা ভালো লাগে। আমার কাছে ঈদের শপিং মানেইে ইজ, ইয়েলো, বাটা বলতে পারেন।  

কিডস সপের ম্যানেজার জানান, বসুন্ধরাতে আমাদের হাউস বেবি প্রোডাক্টের জন্য সুপরিচিত। আমি মনে করি বাচ্চারা যা পরে তাতেই তাকে সুন্দর লাগে। তারপরও তাদের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক আমরা নিয়ে এসেছি। শার্ট সেট, গেঞ্জি সেট, পাঞ্জাবি, লেহেঙ্গা, শারারা, ঘারারা ইত্যাদি রয়েছে। 

তবে দাম এবার একটু বেশি ছোটদের পোশাকে। ভারত এবং চীন থেকে আমদানি করতে একটু কষ্ট হচ্ছে। আবার ডলারের দামও একটু বেশি। ফলে এর প্রভাব পড়েছে স্বাভাবিক। তবে বাচ্চার মায়েরা কোয়ালিটির বিষয় মাথায় রেখে আমাদের পোশাক পছন্দের শীর্ষে রাখেন। 

শপিং মলের শাড়ির দোকানগুলোতেও নারী ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। এখানে রয়েছে জ্যোতি, জামদানি হাউস, নীল আঁচল শাড়িজ, কালাঞ্জলি শাড়িজ, ঢাকা জামদানি কুটির, শাড়িবাজার, শালিমার, অর্চিসহ আরো অনেক অভিজাত শাড়ির দোকান। নিচতলায় ইয়েলো শোরুমে দেখা গেল বেশ ভিড়। 

নতুন আসা পোশাক দেখছেন ক্রেতারা। নিরাপত্তাকর্মী কাদের জানালেন, কয়েক দিন ধরেই ক্রেতা বেড়েছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এই ভিড় থাকবেই। যে ভিড় দেখছেন, তা অন্য দিনেও থাকবে এখন থেকে। 

বসুন্ধরার দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে ইজি ফ্যাশন, আর্টিসান, টুয়েলভ, জেন্টল পার্ক, ইনফিনিটি, রিচম্যান, লুবনান, দর্জিবাড়ি, ইল্লিয়্যিন, ক্যাটস আই, এমব্রেলা, ফিট এলিগ্যান্স, রাইজ, র’নেশন, প্লাস পয়েন্ট প্রভৃতি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের একাধিক শোরুম। সবগুলোতেই ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়। 

তবে এদিন লেভেল টুতে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল আড়ংয়ে। লেবেল থ্রির স্টাইল ইকোতে দেখা গেল নারীদের ভিড়। সেলাইহীন পোশাক কিনে দর্জির কাছে দিতে হবে, তাই আগেই কিনতে এসেছেন বলে জানালেন এখানকার একজন ক্রেতা। 

লেভেল ফাইভের লা রিভ, রেড এবং লেভেল সিক্সে বাটা, এপেক্স, ওরিয়ন, বে ইত্যাদির শোরুমে গতকাল বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করেছেন। বাটার একজন বিক্রয়কর্মী জানালেন, ক্রেতাদের কারণে শোরুম বন্ধ করতে করতে রাত প্রায় সাড়ে ৯টা-১০টা বেজে যায়। কদিন পর আরো ক্রেতা বাড়বে। তখন ডিউটি করে মধ্যরাতে বাড়ি ফিরতে হবে।

নিরাপত্তার প্রধানের দায়িত্বে থাকা আব্দুর লতিফ মিয়া বলেন, প্রতিটি চলন্ত সিঁড়ি আর লিফটের সামনে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়। পুরো পরিবার নিয়ে এসেছেন অনেকে। অনেকে কেনাকাটা সেরে দুই হাত ভরা ব্যাগ নিয়ে নেমে যাচ্ছেন। বিভিন্ন ফ্লোরে বসার স্থানে কেউ কেউ কেনাকাটার মাঝে বিরতি দিয়ে জিরিয়ে নিচ্ছেন। 

আমরা সর্তক অবস্থানে রয়েছি যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা বা যে কেউ অসুস্থ হলে সঙ্গে-সঙ্গে তাদের সাহায্য করার জন্য। যেভাবে ক্রেতার চাপ বাড়ছে শপিং সেন্টার তাতে এখন সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চালু থকলেও আগামী ১৫ রমজানের পর থেকে ক্রেতার কথা মাথায় রেখে সাহেরি বা প্রয়োজন হলে সারা রাত খোলা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!