মোহাম্মদপুরের সাবরেজিস্ট্রার শাহিন আলমের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব করেই বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, তার নেতৃত্বেই সাবরেজিস্ট্রার অফিস ঘিরে গড়ে তুলেছেন দালাল চক্র। যাদের মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। অবৈধ অর্থ দিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন তিনি।
অনুসন্ধানে শাহিন আলমের আলফাডাঙ্গা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁকাইল এলাকায় একটি একতলা বাড়ি রয়েছে বলে সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বাঁকাইলের পাশেই তিনি আরও ২০ শতকের একটি প্লট কিনেছেন, যার বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ফিংগলিয়া মৌজায় প্রায় এক একর আয়তনের একটি মৎস্যঘের কেনার তথ্য পাওয়া গেছে, যার ক্রয়মূল্য ৮০ লাখ টাকা। জমিটি তার শ্বশুরবাড়ির এলাকায়। এ ছাড়া তিনি ওই এলাকায় নামে-বেনামে সম্পদ কিনেছেন।
জানা গেছে, কামরাঙ্গীরচরে চরকামরাঙ্গী মৌজায় সাবরেজিস্ট্রার শাহিন তার ভাইয়ের নামে ৪২৫ অযুতাংশ জমি ক্রয় করেন। ওই জমিতে ছয়তলা একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ভবনটির প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন প্রায় ১,৫৯০ বর্গফুট। পরবর্তী সময়ে এই ভবন এবং জমি তার ভাইয়ের নাবালক ছেলে-মেয়ের নামে ‘হেবা মূলে’ রেজিস্ট্রেশন করে দেন, যার দলিল নম্বর ৫৯৮২ এবং রেজিস্ট্রি খরচ হিসেবে মাত্র চার লাখ টাকা দেখানো হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, শাহিন আলমের ব্যাংকে নামে-বেনামে বিভিন্ন এফডিআর এবং সঞ্চয়পত্র রয়েছে, যেগুলোর মূল্য কোটি টাকার বেশি। অথচ আয়কর রিপোর্টে তিনি মাত্র তিন লাখ ৮৪ হাজার ২২৮ টাকা আয়ের তথ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া আয়করে তিনি দুই লাখ ৩৫ হাজার ২২৮ টাকা ঋণ দেখিয়েছেন এবং ৫০ লাখ ৩৮ হাজার ৭৯২ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। অথচ তিনি মাত্র দেড় বছর আগে এই পদে যোগদান করেন বলে জানা গেছে।
মোহাম্মদপুর সাবরেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাবরেজিস্ট্রার শাহিনের বেতন ৫০-৫৫ হাজার টাকা। অথচ তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। ৫০-৫৫ হাজার টাকা বেতন পেলেও তিনি চলাচলের জন্য প্রতি মাসে রেন্ট-এ-কারের প্রাইভেট কার ভাড়া দেন ৪০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ওই গাড়ির চালককে বেতন দেন মাসে ৩০ হাজার টাকা। মোহাম্মদপুরের সাবরেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ, শাহিন আলম তার পদে থেকে নিয়মিত ঘুষ নেন এবং অবৈধ কার্যকলাপের মাধ্যমে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন। তারা এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সরেজমিনে মোহাম্মদপুর সাবরেজিস্ট্রার অফিসে দেখা গেছে, সাবরেজিস্ট্রার অফিসের দরজার সামনে সরব দালাল চক্র। মাস্টাররোলে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করছেন নিজের খেয়ালখুশিমতো। বিশেষ কিছু ব্যক্তির চোখের ইশারায় নথিপত্র না দেখে স্বাক্ষর করছেন সাবরেজিস্ট্রার শাহিন আলম। এ সময় এ প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে দরজার কেঁচিগেটের এপাশ-ওপাশ করে সংকেত দেন আফিস সহকারী মুন্নি বেগম। সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক অবস্থানে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপরই শুরু হয় সাবরেজিস্ট্রার শাহিন আলমের নাটকীয় যাচাই-বাছাই করে ফাইল দেখার পর্ব।
সাবরেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে অফিস সহকারী মুন্নি বলেন, স্যারের সাথে দেখা করতে হবে না। আপনারা সাংবাদিক, আপনারা তো টাকা পাবেন। সুরুজ স্যার আপনাদেরকে টাকা দেবেন, তিনি সব সাংবাদিককে ম্যানেজ করেন। এ সময় কথা বলতে সামনে আসেন সুরুজ ও আকিব, আর তারাই সেই বিশেষ ব্যক্তি, যাদের ইশারায় নথিপত্র না দেখেই স্বাক্ষর করেন সাবরেজিস্ট্রার শাহিন আলম।
তারা (সুরুজ ও আকিব) বলেন, সাবরেজিস্ট্রার সাহেবের সঙ্গে কী দরকার? আমাদের কাছে বলেন, আমাদের সঙ্গে বললেই হবে। তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে সাবরেজিস্ট্রার শাহিন আলমের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি মেলে।
সাবরেজিস্ট্রার শাহিন আলমের কাছে বিপুল সম্পদসহ তার বিরুদ্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন। সরেজমিনে দেখা অফিসের ভেতরে দালাল চক্রের সরব উপস্থিতি ও বিশেষ কিছু ব্যক্তির ইশারায় নথিপত্র না দেখে স্বাক্ষর করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি (শাহিন আলম) কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। অফিস সহকারী মুন্নী ও মাস্টাররোলে নিয়োগপ্রাপ্ত সুরুজের উপস্থিতিতে সাংবাদিক ম্যানেজ করার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিআর অফিসে মিটিংয়ে যেতে হবে বলে স্থান ত্যাগ করেন সাবরেজিস্ট্রার শাহিন আলম।
আপনার মতামত লিখুন :