শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রহিম শেখ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৪, ১২:২৬ এএম

পাঁচ হাজার টাকা তুলতেও তদবির

রহিম শেখ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৪, ১২:২৬ এএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজধানীর একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী শরিফুল ইসলাম দুই লাখ টাকার একটি চেক নিয়ে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এক শাখা থেকে আরেক শাখা ঘুরেও তুলতে পারেননি টাকা।

তার ভাষ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার তদবিরে ব্যাংকের একটি শাখা থেকে নগদ পাঁচ হাজার তুলতে পেরেছেন তিনি। গতকাল বুধবার রাজধানীর গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা ঘুরে দেখা যায়, ক্যাশ কাউন্টারের সামনে চেক ভাঙিয়ে টাকা তোলার দীর্ঘ লাইন। লাখ টাকার চেক তো দূরে থাক, পাঁচ হাজার টাকার চেকও ক্যাশ করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো শাখায় অবশ্য তদবির ছাড়া গ্রাহককে দুই হাজার টাকা দিচ্ছে। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের মতো অবস্থা ফার্স্ট সিকিউরিটি, আইসিবি, ইউনিয়ন, এক্সিম, পদ্মা, ন্যাশনাল ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের। যদিও ব্যাংকে জমা রাখা টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে আমানতকারীদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কয়েকটি সবল ব্যাংকের শাখা থেকে এখনো আমানতের দুই লাখ টাকাও এক দিনে তুলতে দেওয়া হচ্ছে না।

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২০ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তন আনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যার মধ্যে ৮ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে ছিল এস আলম গ্রুপ। এগুলো হলোÑ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।

এ ছাড়া, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল তারা। পরিবর্তন আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৯-১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে বসে আছে। তার এমন বক্তব্যের পর আমানতকারীদের মধ্যে ভয় ধরে যায়। এরপর থেকে অনেক ব্যাংকে আমানত তোলার হিড়িক পড়ে। ফলে নগদ অর্থের সংকটে পড়ে ব্যাংকগুলো। এরপর গত ৮ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, দেশের ব্যাংকগুলোর প্রায় ৯৫ শতাংশ হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ দুই লাখ টাকার নিচে। প্রতিটি ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত বিমার আওতায় থাকে। ক্ষুদ্র আমানতকারীদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই, পাশে আছে সরকার। কিন্তু এরপরের দৃশ্যপট ঠিক উল্টো।

ঢাকার মিরপুরের আব্বাস উদ্দিন নামের এক আমানতকারী ২০ লাখ টাকা মেয়াদি আমানত রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শাখায়। তিনি সেখান থেকে গত এক মাসে অন্তত ১০ দিন যোগাযোগ করে সাকুল্যে আড়াই লাখ টাকা তুলতে পেরেছেন। 

তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমার পেনশনসহ অন্যান্য সঞ্চয় এই ব্যাংকে আমানত রেখেছিলাম। এখন সবাই টাকা তুলে ফেলছে দেখে আতঙ্কে পড়ে আমিও টাকা তুলে নিতে চেষ্টা করি। কিন্তু ব্যাংক টাকা দিতে পারছে না জেনে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। ছেলের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে রাজধানীর বসুন্ধরা ব্রাঞ্চে গিয়েছিলেন আছিয়া রহমান। মাত্র পাঁচ হাজার টাকার একটি চেক ভাঙাতে গিয়েও হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তাকে।

আছিয়া বলেন, ‘সকালে ব্যাংকে যাওয়ার পর বলা হলো টাকা নেই, চেক রেখে যান। পরে দুপুরের দিকে ব্যাংকে গিয়ে শুনি আজকে নাকি টাকাই দেওয়া হবে না। ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে যদি এত ঝামেলা পোহাতে হয় তাহলে ব্যাংকিং সেবা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’

এ বিষয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চলতি দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ দাবি করেন, গ্রাহকের ভোগান্তি কমাতে আমরা বদ্ধপরিকর। আশা করি, সামনে সমস্যা দ্রুতই কেটে যাবে।’ এদিকে প্রভাবশালী বা ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য আছে এমন অনেকে তদবির করে টাকা তুলতে পারছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একদিকে অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা পাচ্ছেন না, অন্যদিকে নিজের টাকা তুলতে শাখা ব্যবস্থাপকদের রুমে গিয়ে তদবির করতে হচ্ছে একাংশকে।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক আলতাফ হোসেন নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, যেকোনো চেক ভাঙাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) পরিচালক শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, আমানত কমেছে এর অর্থ হলোÑ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে ঘরে রেখে দেওয়া হয়েছে। ওই সময়টাতে দুর্বল ব্যাংক থেকে সাধারণ আমানতকারীরা টাকা তুলে সবল ব্যাংকে রাখে। ফলে ব্যাংক খাতের আমানত কমার কথা নয়। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, ব্যাংক খাতের আমানত কমল কেন? অর্থাৎ ওই টাকা ব্যাংকের বাইরে চলে যায়।

এদিকে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোকে গত অক্টোবর মাসের শুরু থেকে এভাবে নগদ টাকা ধার করার সুযোগ দেওয়ায় গত মাস অক্টোবর থেকে আমানত ফেরত পেয়েছেন অনেক গ্রাহক। তবে সেটাও ছিল চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এক গ্রাহক বলেন, ব্যাংকটির মিরপুর শাখায় তার প্রায় ১২ লাখ টাকার মতো আমানত ছিল। শাখা থেকে টাকা না পেয়ে তিনি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে দুই লাখ টাকার মতো আমানত তুলতে সক্ষম হয়েছেন। তাও একবারে টাকাগুলো পাননি। তবে আর্থিক অনিয়মে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকে আরও বেশি অর্থ সহায়তা দিতে সবল ব্যাংকগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, আমানতকারীদের মধ্যে আস্থার সংকটে সবাই একসঙ্গে টাকা তুলতে চেষ্টা করার কারণেই কিছু ব্যাংকে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, সব গ্রাহক একসঙ্গে এখন ব্যাংকে যাচ্ছেন, তাই টাকা পাচ্ছেন না। আগের চাইতে এখন ব্যাংকে অনেক বেশিসংখ্যক গ্রাহক টাকা উত্তোলন করতে যান। বাংলাদেশ ব্যাংক আস্থার জায়গা তৈরি করতে চায়। আমানতকারীদের আস্থা ধরে রাখার বিষয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও দায়িত্ব রয়েছে।

এদিকে কয়েকটি ব্যাংকে টাকা তোলার চাপ থাকলেও সেই আমানত আবার জমা হচ্ছে সবল ব্যাংকগুলোতে। এর ফলে ওই সবল ব্যাংকগুলোর আমানতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। এর মধ্যে গত আগস্টে সিটি ব্যাংকে রেকর্ড ৩ হাজার কোটি টাকার নিট আমানত প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। পরের মাস সেপ্টেম্বরে ব্র্যাক ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকার নিট আমানত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাইলফলক স্পর্শ করে।

এ নিয়ে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে নগদ টাকা ধার নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় এই সংকট কিছুটা নিরসন হয়েছে। একসঙ্গে অনেক আমানতকারী টাকা তোলার চেষ্টা করায় এই সংকট ঘনীভূত হয়েছে।তবে আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত এই সংকট দূর হয়ে যাবে। ব্যাংকগুলো অনেক গ্রাহকের পুরো আমানত ফেরত দিতে না পেরে সুদের হার এক শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করছে বলেও জানা গেছে। তা ছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের আমানত বিমা স্কিমের আওতায় গ্রাহকের দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত বিমার আওতায় আছে। ফলে ব্যাংক অবসায়ন হলেও আমানতকারীকে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পরিশোধ করবে বলেও সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ফলে অনেক আমানতকারী ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে না পেরে সেই আমানত কয়েকটি ভাগে করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে রাখতে চেষ্টা করছেন।

আরবি/জেডআর

Shera Lather
Link copied!