বিশ্ব ফুটবলে এখন আলোচনা একটাই—এবারের ব্যালন ডি'অর কার হাতে উঠবে? স্পেনের হয়ে খেলা ১৭ বছর বয়সী বার্সেলোনার লামিন ইয়ামাল। নাকি ২৮ বছর বয়সে নিজের ফুটবল জীবনকে নতুনভাবে খুঁজে পাওয়া প্যারিস সাঁ-জার্মেই (পিএসজি) তারকা উসমান দেম্বেলের হাতে।
বুধবার রাতে নিউ ইয়র্কের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে মাঠে নামবে ইউরোপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি।
ম্যাচটি শুধু ইউরোপ-দক্ষিণ আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই নয়—এটি একইসঙ্গে দেম্বেলে বনাম এমবাপ্পে দ্বৈরথ। যারা একসময় ছিলেন ক্লাব সতীর্থ, এখন প্রতিপক্ষ ।
এই মৌসুমে লিগ ওয়ান, ফরাসি কাপ ও ইউরোপ সেরার মুকুট চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে ফেলেছে পিএসজি। এখন বাকি একটাই ট্রফি—ক্লাব বিশ্বকাপ। দেম্বেলের পায়ের জাদুতেই ভরসা রাখছে প্যারিসের ক্লাবটি।
২০২৩ সালে কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিলে পিএসজিতে নতুন এক শূন্যতা তৈরি হয়। সেখানেই আবির্ভাব ঘটল দেম্বেলের।
বার্সেলোনা থেকে মাত্র ৪৩.৫ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনা দেম্বেলে এবার ৫১ ম্যাচে করেছেন ৩৪ গোল ও ১৫ অ্যাসিস্ট। আগের দেম্বেলে ছিলেন ‘প্রতিভার জ্বালামুখ’, এখন তিনি যেন ‘স্ফুলিঙ্গে বিস্ফোরিত আগ্নেয়গিরি’।
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে এমমবাপ্পে বলেন, ব্যালন ডি’অরের জন্য যদি আমাকে ভোট দিতে বলা হয়, আমি দেম্বেলেকেই বেছে নেব। এতে আর ব্যাখ্যার কিছু নেই।
অন্যদিকে পিএসজি প্রেসিডেন্ট নাসের আল-খেলাইফিও বলেন, দেম্বেলে যা করেছে, তা অতুলনীয়। যদি সে ব্যালন ডি’অর না পায়, তাহলে এই পুরস্কারের মানদণ্ড নিয়েই প্রশ্ন তুলতে হবে।
এক সময় বার্সেলোনায় থাকাকালীন দেম্বেলে ছিলেন সবচেয়ে বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত খেলোয়াড়। অনিয়মিত জীবন, দেরিতে অনুশীলনে যাওয়া, ভিডিও গেমে রাতজাগা—সব মিলিয়ে আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।
কিন্তু ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মরক্কোয় প্রেমিকা রিমাকে বিয়ে করার পর জীবনটাই বদলে যায়। খুব শিগগিরই বাবা হন দেম্বেলে। এরপরেই পরিবর্তন আসে খাদ্যাভ্যাসে, অনুশীলনের ধরনে ও পেশাদার মনোভাবেও।
বার্সেলোনার শেষ দুই মৌসুমে নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তোলেন। এবার পিএসজিতে এসে তা যেন বিস্ফোরণের রূপ নিয়েছে।
বার্সা কোচ জাভি একসময় বলেছিলেন, সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে দেম্বেলে হতে পারে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়।
পিএসজি কোচ লুইস এনরিকের মতে, এমবাপ্পে চলে যাওয়ার পর দেম্বেলেকে বলা হয়েছিল আরও গোল করতে হবে। সে তা করেছে।
বার্সা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা তো ২০২১-এ সরাসরি বলেই দিয়েছিলেন, দেম্বেলে এমবাপ্পের চেয়েও ভালো।
ফুটবলবিশ্ব দেখছে এক অসাধারণ প্রত্যাবর্তনের গল্প। যার শুরু হয়েছিল চোট, অনিয়ম আর অপচয়ের ইতিহাস দিয়ে, আর শেষ হতে পারে বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের ট্রফি হাতে।
২২ সেপ্টেম্বর ব্যালন ডি’অর বিজয়ীর নাম ঘোষণা হবে। কিন্তু এর আগেই দেম্বেলে অনেককেই বিশ্বাস করিয়ে দিয়েছেন—প্রতিভা থাকলেই চলবে না, দরকার সময়মতো পরিণত হওয়া। আর সেটা তিনি হয়েও গেছেন। এখন শুধু অপেক্ষা, ‘সোনার বল’ তার হাতেই ওঠে কি না।
আপনার মতামত লিখুন :