ক্রিকেটভক্তদের কাছে তিনি পরিচিত একজন মারকুটে অলরাউন্ডার হিসেবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার নাম যেন ‘আতঙ্কের সমার্থক’।
কিন্তু এই আন্দ্রে রাসেল যে কতটা কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন, তা জানলে অবাক হতে হয়।
কিংস্টনের বস্তি থেকে ক্রিকেট মাঠে
১৯৮৮ সালের ২৯ এপ্রিল জ্যামাইকার কিংস্টনে জন্ম রাসেলের। বেড়ে উঠেছেন এক দরিদ্র পরিবারে।
তার মা ছিলেন স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক। রাসেলের পরিবারে ছিল আর্থিক অনটন, যার কারণে শিশুকাল থেকেই জীবন সংগ্রামের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার।
ছোটবেলা থেকেই ফুটবল ও ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক ছিল। তবে তার বাবা চেয়েছিলেন রাসেল সেনাবাহিনীতে যোগ দিক। কিন্তু রাসেলের মন পড়ে থাকত ক্রিকেট মাঠেই।
কঠিন পরিশ্রমে রাসেলের শুরু
রাস্তায় টেনিস বল দিয়ে খেলার দিনগুলো শেষ করে আন্দ্রে রাসেল ভর্তি হন মাইকেল হোল্ডিং ক্রিকেট একাডেমিতে। সেখান থেকেই শুরু হয় তার আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট শিক্ষা।
উচ্চতা ও পেশিবহুল শরীর থাকায় প্রাথমিকভাবে তাকে পেসার হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটিংয়েও নিজেকে প্রমাণ করতে শুরু করেন।
২০০৭ সালে তিনি প্রথমবারের মতো জ্যামাইকা জাতীয় দলে ডাক পান। শুরুতে দলে নিয়মিত হতে পারেননি। কিন্তু ২০১০ সালে বিস্ফোরক অলরাউন্ডার হিসেবে নজরে আসেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক
২০১১ সালে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের স্কোয়াডে ছিলেন রাসেল।
তবে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের আগমনের ঘণ্টা বাজান ২০১১ সালে ভারত সফরে, যেখানে মাত্র ৬৪ বলে ৯২ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন।
এরপর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার ক্যারিয়ার নতুন উচ্চতা পায়। ২০১২ ও ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন রাসেল।
বিশ্বজুড়ে রাসেলের রাজত্ব
রাসেল শুধু জাতীয় দলের জন্যই নন, বিশ্বের প্রায় সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অন্যতম ভয়ংকর খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত।
আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া ইনিংস, বিগ ব্যাশ, সিপিএল কিংবা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল)—সব জায়গাতেই নিজের বৈশ্বিক ব্র্যান্ড গড়ে তুলেছেন।
তার স্ট্রাইক রেট, শেষদিকে এসে ম্যাচ ফিনিশ করার ক্ষমতা এবং বল হাতে ব্রেকথ্রু এনে দেওয়ার ক্ষমতা তাকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এক অনন্য অলরাউন্ডারে পরিণত করেছে।
ব্যক্তিগত জীবন ও চ্যালেঞ্জ
ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পাশাপাশি নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে রাসেলকে। ইনজুরি, ডোপিং ইস্যু, ফর্মহীনতা—সবই এসেছে জীবনের পথে।
২০১৭ সালে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ডোপ টেস্ট ফাঁকি দেওয়ার কারণে। তবে সেই ধাক্কা কাটিয়ে ফেরেন আরও ভয়ংকর হয়ে।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন সংগীতশিল্পীও বটে। তার ‘ড্রে রাস’ নামে একটি মিউজিক প্রোজেক্ট রয়েছে, যেখানে তিনি নিজেই গান লেখেন ও পরিবেশন করেন।
আপনার মতামত লিখুন :