শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জাহিদ হাসান মাহা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০১:১৬ পিএম

৩৯ বছরে বিশ্ব মঞ্চে অর্জনে শূন্য বাংলাদেশের ক্রিকেট

জাহিদ হাসান মাহা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০১:১৬ পিএম

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। পূর্ণাঙ্গ টেস্ট মর্যাদা আসে ২০০০ সালে। প্রায় চার দশক কেটে গেলেও বিশ্বমঞ্চে লাল-সবুজ জার্সির উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো অর্জন নেই। বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কিংবা আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি—কোনোটিতেই এখনো ফাইনাল খেলার সুযোগ মেলেনি।

তবে এই ৩৯ বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের একমাত্র সফলতা ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলা। ওই আসরে গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেয় মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বাধীন দল।

সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২৬৪ রান। জবাবে শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সহজ জয় পায় ভারত। 

এ ছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরেকটি অর্জন তিনবার এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলা। তবে তিনবার ফাইনাল খেললেও কখনো পায়নি শিরোপার দেখা। মাঝে মাঝে ছোট ছোট সাফল্যের ঝলক দেখা গেলেও তা কখনোই স্থায়ী হয়নি।

২৫ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপের ১৭তম আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ১২০ বলে মাত্র ১৩৬ রান তাড়া করতে না পারা বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার বড় প্রমাণ। 

সহজ লক্ষ্যও যখন চাপের কাছে হার মানে, তখন বোঝা যায় ২২ গজে টাইগারদের দুর্বলতা এখনো কাটেনি।

দেশের ক্রিকেটের ঘাটতি কোথায়? 

১. ব্যাটিং মানসিকতা

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এখনো ম্যাচ শেষ করার দৃঢ়তা দেখাতে পারেন না। টেকনিক্যাল সীমাবদ্ধতা ও মানসিক দুর্বলতা বড় সমস্যা। 

প্রায় সময় ম্যাচের শেষ দিকে গিয়ে ভুল ও অযথা বড় শট খেলতে গিয়ে একের পর এক উইকেট বিলিয়ে পরাজয়ের শিকার হতে এখনো দেখা যায়। 

২. টেস্টের প্রতি গুরুত্বহীনতা

বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটি বড় সমস্যা হলো টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি পর্যাপ্ত গুরুত্ব না দেওয়া। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের মাঝে সাফল্য থাকলেও লাল বলের ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা এখনো অনিশ্চিত।

এখানে বড় একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো আন্তর্জাতিক টেস্ট সিরিজের অভাব। বছরের বিভিন্ন সময়ে সিরিজের ফাঁক থাকায় খেলোয়াড়রা ধারাবাহিক প্রস্তুতি নিতে পারে না।

৩. ডোমেস্টিক কাঠামোর দুর্বলতা

ডোমেস্টিক ক্রিকেটই হচ্ছে দেশের ক্রিকেটের মেরুদণ্ড। একদিকে এটি খেলোয়াড়দের প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা গড়ে তোলে, অন্যদিকে লম্বা সময় ধরে টিকে থাকার জন্য ফিটনেস ও টেকনিকের পরীক্ষা নেয়। কারণ এখানেই লুকিয়ে আছে আগামী দিনের তারকা তৈরি করার আসল কারখানা।

জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার আগেই দেশের ক্রিকেটাররা নিজেদের মেধা, দক্ষতা ও ধারাবাহিকতা প্রমাণ করেন ঘরোয়া লিগে।

ক্রীড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্যের জন্য একটি দেশের ক্রিকেট কাঠামোর ভিত শক্ত করতে হলে ডোমেস্টিক ক্রিকেটকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হয়।

বর্তমান বাংলাদেশে জাতীয় লিগ, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, বিসিএলসহ বিভিন্ন ঘরোয়া টুর্নামেন্টে হচ্ছে। কিন্তু প্রতিযোগিতার মান কম থাকায় এখান থেকে দেশের ক্রিকেট লাভবান হতে পারছে না।

দেখা যায়, স্থানীয় লিগগুলোতে প্রতিযোগিতার মান কম, পিচ প্রস্তুতি মানসম্মত নয়, যার ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানিয়ে নিতে অনেক সমস্যা হয়।

পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, এখান থেকেই উঠে এসেছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল কিংবা মুশফিকুর রহিমের মতো তারকা ক্রিকেটাররা।

৪. প্ল্যানিং ও পরিচালনায় ঘাটতি

বাংলাদেশ ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায় অন্যতম বড় সমস্যা হচ্ছে পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ঘাটতি। খেলোয়াড়দের প্রতিভা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনা ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত দিকনির্দেশনার অভাব জাতীয় দলের ধারাবাহিকতায় প্রভাব ফেলছে।

অনেক সময় টুর্নামেন্টভিত্তিক পরিকল্পনা করা হয়, কিন্তু ৫-১০ বছরের টেকসই ভিশন তৈরি হয় না। অন্যদিকে, যারা ক্রিকেট খেলেননি বা মাঠের বাস্তবতা জানেন না, তারা অনেক সময় নীতিনির্ধারণী ভূমিকায় থাকেন।

সহজে বলতে গেলে, দেশের ক্রিকেটের আসল ঘাটতি পরিকল্পনা ও সঠিক পরিচালনায়।

৫. কোচিং ও ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট

প্রতিভা বের হলেও সঠিকভাবে গড়ে তোলা ও দীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগের অভাব দেখা যায়। অপরদিকে, কোচিং মানসম্মত না হলে প্রতিভা বিকাশ সম্ভব নয়, আর সঠিক ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট না থাকলে প্রতিভা টিকিয়ে রাখা যায় না।

এদিকে, দেশের ক্রিকেটকে যদি সত্যিকারের ক্রিকেটশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হয়, তবে  কাঠামোগত সংস্কার দরকার। পিচ ও অবকাঠামো উন্নয়ন, মানসিক দৃঢ়তা তৈরির ট্রেনিং, তরুণদের সঠিকভাবে লালন-পালন এবং বোর্ডের কার্যকর পরিকল্পনা ছাড়া সাফল্যের মুখ দেখা সম্ভব নয়।

প্রায় চার দশকের এই যাত্রায় সমর্থকরা একটাই প্রশ্ন করছেন—বাংলাদেশ কি শুধু খেলার জন্য খেলবে, নাকি অর্জনের জন্য লড়বে?

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!