ফুটবলকে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু আজকাল এটি শুধুমাত্র খেলার সীমা অতিক্রম করে রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনারও অংশ হয়ে উঠেছে। এখনকার সময়ের বড় বড় ক্লাবগুলো কেবল খেলাধুলার প্রতিষ্ঠান নয়, তারা বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ও রাজনৈতিক প্রভাবের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
ফুটবলে রাজনীতি প্রবেশ করেছে বিভিন্ন দিক থেকে—যেমন: রাষ্ট্রের মালিকানাধীন ক্লাব, স্পন্সরশিপ চুক্তি, সামাজিক এবং রাজনৈতিক বার্তা প্রচার।
বিশেষ করে ফুটবলাররা, যারা সবচেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয়, তারা সাধারণত নিরপেক্ষ থাকা অসম্ভব। ক্লাব যদি কোনো রাজনৈতিক অবস্থান জানায়, সেই সময় তার সবচেয়ে পরিচিত তারকা খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতি অনেক সময় শব্দের থেকেও শক্তিশালী বার্তা দেয়।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, মোহাম্মদ সালাহ ও মেসুত ওজিল আজকের সময়ের ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকাদের মধ্যে অন্যত লিজেন্ড। তারা কেবল মাঠেই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, স্পন্সরশিপ ও বিশাল ভক্তসমাজের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার করে।
উদাহরণস্বরূপ, মেসুত ওজিল মানবাধিকার ও জিওপলিটিক্স নিয়ে প্রকাশ্য বক্তব্য দিয়েছেন, যা প্রমাণ করে ফুটবল কখনও কখনও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে জড়িয়ে যায়।
রোনালদোর ক্লাব ম্যানেজমেন্টের সমালোচনা থেকে বোঝা যায়, খেলোয়াড়রা শুধু ক্লাবের কর্মচারী নয়, তারা শক্তিশালী স্টেকহোল্ডার। তাদের কথাই মাঠের বাইরেও প্রভাব বিস্তার করে।
ক্লাবগুলো এখন স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি থেকে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। ফুটবলাররা সামাজিক ন্যায়, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক বা সামাজিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।
মোহাম্মদ সালাহ শুধু লিভারপুলের খেলোয়াড় নন, তিনি পুরো মধ্যপ্রাচ্যের এবং এর বাইরে—সংস্কৃতির আইকন।
ভক্তরা কখনও কখনও খেলোয়াড়ের ধর্ম, জাতীয়তা বা পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে তাদের প্রত্যাশা প্রকাশ করে। এই পরিস্থিতিতে, খেলোয়াড়ের জন্য নিরপেক্ষ থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।
এদিকে, মূল সমস্যা হলো খেলোয়াড়রা কি বলবেন না, তা নয়, বরং তাদের কথা কিভাবে খেলাকে প্রভাবিত করবে। প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্য অত্যাচারিতদের স্বাধীনতা দিতে পারে এবং দীর্ঘদিনের সংলাপকে উদ্দীপিত করতে পারে। তবে একই সঙ্গে এটি সমর্থক এবং ক্লাবের মধ্যে বিভাজনও সৃষ্টি করতে পারে।
যেহেতু খেলাধুলা এবং রাজনীতি একে অপরের কাছাকাছি আসছে, তাই আধুনিক ফুটবল লিজেন্ডদের জন্য চুপ থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। ক্লাবগুলো যেমন আক্ষেপ বা পরিকল্পনার মাধ্যমে রাজনৈতিক হয়ে উঠছে, তেমনি হয়তো ‘শুধু ফুটবল খেলো’ এই যুগের লিজেন্ডদের সময় শেষ হয়ে আসছে।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন